সামিয়া খুব লক্ষ্মী মেয়ে |
সামিয়ার ছোটবেলার কিছু অদ্ভুত পছন্দ
সামিয়া একেবারে ছোট বেলা থেকেই সাধারণ বাচ্চা থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম ছিল বুদ্ধি বিবেচনায়, পছন্দ-অপছন্দ বিশেষ করে খাওয়ার ব্যাপারে। সামিয়ার একটা দিক ছাড়া মাশাল্লা সব গুণে গুণান্বিত ছিল আল্লাহর রহমতে এখনো আছে। ঐ একটা দিক হল ওর কোন জিনিস সেটা খেলনাই হোক, পোশাকই হোক বা খাবারই হোক কাউকে দিতে চাইত না এমনকি দিতই না। অনেক বাচ্চাই দিতে চায় না, কিন্তু সামিয়ার দিতে না চাওয়ার কৌশল ছিল অন্যরকম।
সরাসরি না করত না শুধু নানা রকম অজুহাত দাঁড় করাত। দরুন কেউ খেলনা চাইল সেই খেলনাটা খারাপ, দেখতে ভালো না, ভাঙ্গা খাবার ভাগ দিতে হবে খাবার মজা হয়নি ঝাল হয়েছে খেতে পারবে না ইত্যাদি নানা রকম বাহানা করত কিছুতেই দিত না। বুদ্ধিমান বড় মানুষ যেমন কোন জিনিস কাউকে দিতে না চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যায় ঠিক তেমনি এই ছোট্ট বাচ্চাটাও যত রকমের কৌশল আছে বুদ্ধিমানের মত এড়িয়ে যেত কখনও সরাসরি না করত না, কিন্তু কিছুতেই দিত না।
সরাসরি না করত না শুধু নানা রকম অজুহাত দাঁড় করাত। দরুন কেউ খেলনা চাইল সেই খেলনাটা খারাপ, দেখতে ভালো না, ভাঙ্গা খাবার ভাগ দিতে হবে খাবার মজা হয়নি ঝাল হয়েছে খেতে পারবে না ইত্যাদি নানা রকম বাহানা করত কিছুতেই দিত না। বুদ্ধিমান বড় মানুষ যেমন কোন জিনিস কাউকে দিতে না চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যায় ঠিক তেমনি এই ছোট্ট বাচ্চাটাও যত রকমের কৌশল আছে বুদ্ধিমানের মত এড়িয়ে যেত কখনও সরাসরি না করত না, কিন্তু কিছুতেই দিত না।
ওর আরেকটা দিক আছে পয়সা খরচ করতে চাইত না। এতটুকু ছোট বাচ্চা যে এত পয়সা চিনতে পারেন ওকে না দেখলে তা অনেকেরই বিশ্বাস হবে না, কিন্তু সত্যিই। উদাহরণ দিচ্ছি ও একটা কাজ প্রায়ই করত তা হল ও খুব ঘামত, বিশেষ করে গলা ঘেমে পানি জমে থাকত। গরম লাগছে কিংবা গলা ঘেমে গেছে যথারীতি ফ্যান ছাড়তে হয় ফ্যান ছাড়লো হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল ফ্যান ফুল স্পিডে ঘোরার আগেই ফ্যান অফ করে দিল আর লাগবে না গায়ের ঘাম শুকাক আর না শুকাক। এসব ও নিজে নিজেই করত আমরা শুধু দেখতাম, ফ্যানের সুইচ বিছানার সাথে থাকায় খুব সহজেই এসব করতে পারত। ফ্যান বেশিক্ষণ চললে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে তাই অফ করে দিত। মেহমান আসলে কেউ যদি ফ্যান ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতো বা খালি রুমে ফ্যান ছাড়া থাকত তা হলে সামিয়ার মাথা গরম হয়ে যেত। বিড়বিড় করে বলতে থাকতো ফ্যান ছেড়ে রাখছে, দেখছ ফ্যান ছেড়ে রাখছে।
বড় হয়ে কি হবে জিজ্ঞেস করতেই বলল টিচার হব ডাক্তার হব না কারণ টিচার (ওর মা টিচার) অনেক ক্ষণ বাসায় থাকে আর ডাক্তার নাইট করে (ওর বাবা ডাক্তার তাই নাইট শব্দটি ওর কাছে খুব পরিচিত) তাই ডাক্তার হব না, নাইট করা ওর পছন্দ না। ওকে বলা হল টিচারদের পয়সা কম ডাক্তারদের অনেক পয়সা, অনেকটা ভাবনায় পড়ে যায় একদিকে নাইট করা অন্যদিকে পয়সা; বিপাকে পড়ে যায় শেষ পর্যন্ত পয়সার কাছে হার মানে বলে ডাক্তারই হব। এখন বুঝেন ২+ বছরের বাচ্চার কাছে পয়সা কতটা মূল্যবান। আবার পছন্দসই জিনিস না হলে কখনও পছন্দ করত না, পোশাক কিংবা খেলনা পছন্দ না হলে কিছু না বলে মুখ বেঁকিয়ে নীরবে সরে পড়ত মানে এটা ওর পছন্দ না।
খাওয়ার ব্যাপারে সামিয়ার কিছু অদ্ভুত ভালো লাগা ছিল। খাওয়ার শেষে প্লেটে লেগে থাকে মাখামাখা একটু আঠালো জুটা ও খুব খুব পছন্দ করত। কেউ খেতে বসলে ব্যস্ত হয়ে যেত আমি চাটা খাব (আঠালো জুটাকে ও চাটা বলত) যত ব্যস্তই থাকুক না কেন খেলা নিয়ে বাসার কেউ খেতে বসলেই চাটা খাওয়ার জন্য হাজির হত চাটা এত পছন্দ করত। মাছের কাটা মাংসের হাড্ডি খেতে খুব পছন্দ করত। শুটকি ও ঝাল পছন্দ ছিল, যতই ঝাল হোক খেতে আপত্তি নেই; চোখ দিয়ে পানি বের হতো তবুও খেত। বলতাম ঝাল খেলে পাছা জ্বলবে ও বলতো ‘জ্বলুক’ তবুও খাবে। মাছের কাটা, মাংসের হাড্ডি, শুটকি ও ঝাল কোন বাচ্চা খেতে পছন্দ করে না এই ছোট্ট সামিয়ার পছন্দ অনেককে অনেকটা অবাক করত। খাওয়ার পরিমাণ ছিল অল্প, অনেক সময় খাবার নিয়ে খুবই বিরক্ত করতো খেতে চাইত না কিন্তু পছন্দগুলো ছিল ব্যতিক্রম।
আমলকী আর যষ্টিমধু খুব পছন্দ। চাইলে দিতেই হবে পরিমাণে সামান্য হলে চলত না, ওর মন মতো চাই আর না হলে ব্ল্যাক-মেইল করত, বলত আমি গোসল করব না বা আমি বিকেলে ঘুমাবো না ইত্যাদি।কালোজিরা খুবই পছন্দ সামনে কালোজিরা পেলেই হল কাচা কালোজিরা এমনি খেতে। ঘুরেফিরে এসেই বলতো গরম পানি দাও (গরম পানি মানে কালোজিরার চা)। আমরা বাসায় কালোজিরা দিয়ে চা করে খেতাম। কালোজিরায় সব রোগের ঔষধি গুণ থাকায় আমরা বড়রা খাওয়ার জন্য কালোজিরার চা করে ফ্লাক্সে রেখে দিতাম। শুধু কাচা কালোজিরা সাধারণত বড়রাও খেতে সাহস করে না আর ও তো ছোট বাচ্চা। ঝাল, টক ও তিতা জাতীয় খাবার সামিয়া খুব পছন্দ করত। কখনোই পেঁপে খেতে চাইত না, সম্ভবত একবার পেঁপে খেতে গিয়ে তিতা লেগেছিল মনে হয় উপরে সবুজ অংশের কিছুটা ছিল সেই যে বন্ধ হলো তারপর থেকে আর কখনো পেঁপে খেতে না।
কোথাও কিছু খেয়ে আসলে কি খেয়েছে জিজ্ঞেস করলে কিছুতেই বলত না, পেটো বোম ফোটালেও বলতো না। এমন লক্ষ্মী গুণ খুব কম বাচ্চার মধ্যেই দেখা যায়। ছোটবেলা থেকেই সামিয়া খুবই গোছালো। বাসায় কোন বাচ্চা আসলে একটু অগোছালো করত তাহলে ওর মেজাজ কে দেখে। বিড়বিড় করা ওর একটা স্বভাব ছিল, যেকোনো জিনিস অপছন্দ হলে কারো সামনে কিছু বলত না শুধু বিড়বিড় করে নিজেই বলতে থাকতো এটা করছে ওটা করছে। সাধারণত ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এগুলো থাকে না; না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। সামিয়া অনেকটা ব্যতিক্রম বাচ্চা, মাশাআল্লাহ বুদ্ধিমান ছোট বেলা থেকেই।
সামিয়া একেবারে ছোটবেলা শি-শি করলেও আমরা পানি দিয়ে পরিষ্কার করতাম। ও একটু বড় হওয়ার পর শি-শি করার পর পানি না দিলে বাথরুম থেকে বের হতো না এমন কি কলে পানি না থাকলেও না; বলত ফুটানো পানি দাও পানি না দিলে কান্নাকাটি শুরু করত। দুই বছর+ বাচ্চা কখনো শি-শি করে পানির জন্য এমন করে নজির খুব একটা পাওয়া যাবে না। তাই সামিয়া ছোটবেলা থেকেই অনেক বাচ্চাদের থেকে অনেকটা আলাদা ছিল। সামিয়া মাশাআল্লাহ বুদ্ধিমতী এবং খুবই ভদ্র মেয়ে, অভদ্রতা আজও ওর পছন্দ নয়।
সামিয়া ছোটবেলা খুব একটা আবদার করত না তবে কিছু চাইলে যদি দেওয়া সম্ভব না হতো তাহলে বুঝিয়ে বললে বুঝত কিন্তু মাঝে মধ্যে দু’একটা দাবি জুড়িয়ে দিত। যেমন একদিন ওকে নিয়ে বাইরে বেরিয়েছি দোকানে কেক দেখে বায়না করছে কেক কিনে দিতে আমি বললাম আমার কাছে এখন টাকা নাই তোকে মার্কেটে নিয়ে পরে কিনে দিব সাথে সাথে বলল আমাকে ওই দিন জুতো কিনে দিতে হবে, আচ্ছা দিব বলাতেই শান্ত কিন্তু দিব না বলা যাবে না বললে গাল ফুলে যেত। ও ছোট থেকে বড় হয়েছে বুঝ মেনে বুঝালে ও বুঝ মানত। অতিরিক্ত বায়না করে কখনও জিত করত না।
অচেনা মানুষদের সাথে খুব একটা মিশত না বিশেষ করে ছেলেদের সাথে। বাসায় অপরিচিত কেউ আসলে একটু পিছন থেকে ফলো করত মানুষের মধ্যে তুলনা খুঁজে বের করত। কে কার থেকে আলাদা বা কি রকম বৈশিষ্ট্য এক নিমিষে দেখে বলে দিত। বাসায় মেহমান আসলে এটাই ছিল সামিয়ার কাজ। ছেলেদের সাথে মিশতে নেই এ ধরনের কথা আমরা কিন্তু কখনো ওকে বলিনি কেন জানি না ও নিজের থেকে একটু এড়িয়ে চলত।
সামিয়া উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের তাই ওর খুব কষ্ট ছিল। একদিন কষ্টে ক্ষুবের সাথে বলতেছে আরেকটু ফর্সা হলেই চলতো। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মিষ্টি মেয়ে ওর মধ্যে একটা আকর্ষণ ছিল, সামিয়ার মার্জিত স্বভাব ওকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। তাই লক্ষ্মী মেয়ে সামিয়াকে সবাই যেন অনেকটা বেশি ভালোবাসতো আদর করত।
আদর আদায় করার কৌশল খুব ভালো জানতে, ওর আচার-আচরণ, বুদ্ধিমত্তা ও কথাবার্তায় ওকে আদর করত সবাই, আদরটা যেন ওর পাওনাই ছিল এমন ভাবে কথা বলত। যে কেউ একটু সময়ের জন্য দেখলেও কাছে টানত আদর করত। যদিও বাচ্চাদের সব সময় সবাই আদর করে তবুও কেন জানি ওকে একটু বেশি আদর করত। সত্যি বলতে অতিরিক্ত আদরটুকু ওর প্রাপ্য।
সামিয়া মত ধৈর্যশীল বাচ্চা তো দূরের কথা বড় মানুষও সাধারণত পাওয়া যায় না। ও ছোটবেলা কোথাও কেটে ফেললে বা গুটা/ফোঁড়া হলে কিংবা অসুস্থ হলে খুব বেশি বিরক্ত বা কান্নাকাটি করত না। শুধু চুপ করে পরে থাকত তখন একটু বেশি আদর দিতে হত। ছোটবেলায় ওর পায়খানা রেগুলার হতো না একদিন দু’দিন পরপর পায়খানা হত তখন ওর খুবই কষ্ট হতো কখনো কখনো বলত লাগছে তো লাগছে তো ধৈর্যের শেষ সীমানায় গেলে সামিয়া কথাটা বলত। কষ্টে চোখ দিয়ে পানি চলে আসত কিন্তু কান্নাকাটি করত না। ছোট বাচ্চা তাই কমোডে বসতে পড়তো না আমাদের দুই পায়ের উপরে বসিয়ে বাথরুম করাতে হত। তখন ওকে একটু বেশী আদর দেওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না কিন্তু ভিতরে ভিতরে প্রচণ্ড কষ্ট পেতাম। এত ধৈর্যশীল বাচ্চা আমি আমার জীবনে দেখিনি তাই ওকে নিয়ে আমার একটু লিখতে ইচ্ছে করল। এখন সামিয়া অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, রং এখন ওর মন মত ফর্সা। আমার পৃথিবীর সবটুকু আদর ওর জন্য।
No comments:
Post a Comment