Pages

মানুষ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে জীবনে রশ্মি পেতে চায়






মানুষ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে জীবনে রশ্মি পেতে চায়



মানুষ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে জীবনে রশ্মি পেতে চায়
ছবিই বলে দিচ্ছে, আমি আর কি লিখব। ছেলেটির নাম এখন মনে পড়ছেনা। একটি মিষ্টি ছেলে, কাছে পেলে ইচ্ছে করবে আদর করতে। এখন নিশ্চয় বড় হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে বাসের ভিতর ছবিটা তুলি। ছবি তুলতে চাইলে খুব খুশী হয়ে হেঁসে দেয়। আমি ছবিটা রেখে দেই, ওকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল, হয়ে ওঠেনি। লেখার সুবিদার্থে আমি ওর নাম দিলাম “আদর্শ”, বয়স ৭-৮ বছর হবে হয়তো। পেপার বিক্রি করতে আদর্শ যখন বাসে ওঠে বাসের যাত্রীরা হতভম্ব হয়ে যায় আদর্শকে দেখে, আমিও অবাক হই। হওয়ারই কথা, আদর্শের মত বয়সের ছেলেরা মায়ের কোলে বাবার আদরে থাকে। ছোট্ট একটা ছেলে তার উপর পা নেই কাঠের ক্র্যাচের সাহায্যে হাঁটে, সহজভাবে চলাফেরা করতে পারেনা সেকিনা বাসে বাসে পেপার বিক্রি করে পেটের দায়ে।
আদর্শ ভিক্ষা করতে পারত, খুব সহজেই মানুষের দয়া পেত কিন্তু না ভিক্ষা করছেনা কাজ করছে এখানেই আমাদের শিক্ষণীয়। আমাদের মানবিক মানসিকতা পরিবর্তন করা কতটা প্রয়োজন।

সমাজের শ্রেণিভেদে মানুষ কর্মক্ষমতা পরিহার করে হাত পাতায় অভ্যস্ত হচ্ছে
বর্তমানে সুস্থ-সবল মানুষ ভিক্ষা করছে। আবার এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী আছে যারা মানুষ ভাড়া করে বা কিনে বিকলাঙ্গ বানিয়ে ভিখুক তৈরী করে বাণিজ্য করছে। খুব সহজ এবং লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে ভিক্ষা। সুস্থরা অসুস্থ হওয়ার বান করে প্রতিবন্ধী সেজে ভিক্ষা করছে, ছোট ছোট বাচ্চা দিয়ে ভিক্ষা করাছে। এইতো কয়েক দিন আগে রাস্তায় কিছু লোক জড়ো হয়েছে দেখে কৌতহল নিয়ে আমি দেখতে গেলাম দেখি ৪/৫ বছর বয়সের সুস্থ বাচ্চা মেয়েকে প্রতিবন্ধী (হাঁটতে পারেনা) বানিয়ে দাদী নাতনী দিয়ে ভিক্ষা করছে। রাস্তার জনগণ ধরে ফেলে বাচ্চাটি প্রতিবন্ধী না হাঁটতে পারে এবং প্রমাণ করে বাচ্চা মেয়েটা সত্যি হাঁটতে পারে। বৃদ্ধমহিলা কিছুতেই স্বীকার করছেনা তার নাতনী সুস্থ। মজার ব্যপার হল বাচ্চা মেয়ের অভিনয়, প্রতিবন্ধী প্রমাণ করতে সেও কম চেষ্টা করেনি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে বড়দের কাছে। আরেক দিন শাহ্‌বাগে ৮/৯ বছর বয়স হবে ছেলেটির, কথা বলতে পারে না বাসে ওঠে সাহায্য চাচ্ছে, বাচ্চা ছেলে কথা বলতে পারেনা বলে অনেকেই যার যার সাধ্যমত দিয়েছে। টাকা পেয়ে খুশীতে বাস থেকে নেমে হাঁসতে হাঁসতে কথা বলতে থাকে বাসের দিকে তাকিয়ে। বাসের সবাইকে চমক লাগিয়ে দেয়। ঐদিন অনেক জ্যাম ছিল বলে ছেলেটির নাটক বাসের সবাই দেখে এবং ভিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে। এরকম একটা দুইটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এখন এভাবেই ভিক্ষা ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে। ঢাকায় রাস্তায় বেঁধে মেয়েদের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়, টাকা না দিলে ছাড়তে চায় না মানুষের গায়ে হাত বুলাতে থাকে একই কাজ করে হিজরাও। হিজরারা আরো অনেক বেশী বিপদজনক, তারা শুধু ঢাকায় না দেশের সর্বত্র বিস্তার করছে। রিক্সা, বাস, ট্রেন হিজরাদের প্রভাব খাটাচ্ছে টাকা না দিলে মুখ খারাপ করে এমনকি কাপড় খুলে ফেলা হুমকি দেয়, বাধ্য হয়ে দিতে হয় অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য। শুধু হুমকি দেয়না হিজরারা কাপড় খুলেই ফেলে। সমাজের শ্রেণিভেদে মানুষ কর্মক্ষমতা পরিহার করে হাত পাতায় অভ্যস্ত হচ্ছে, কাজ করার মানসিকতা হ্রাস করে হাত পাতার প্রবনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে লোভের মোহ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে
শুধু এদের কথা বলতে আদর্শকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিনি। আমি নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, সমাজ থেকে সমাজ, জাতি থেকে জাতি, দেশ থেকে দেশ মানুষে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে হাত পাতার নিলজ্জ প্রবণতা। একটি সমাজে কিংবা একটি দেশে হাত পাতার নৈতিক অবক্ষয় সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের কোন দেশে দূর্যোগ দেখা দেয় তাহলে ঐ দেশ তাকিয়ে থাকে কিংবা হাত পাতে অন্য দেশের দিকে আবার কোন দেশে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিলে বা যুদ্ধের শিকার হলে পাশের দেশ সাহায্যের হাত বাড়ায় শুধুমাত্র ত্রাণ পাবার আশা করে। হ্যাকারা মানুষের স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরমার করে দিয়ে তাদের জীবন রুদ্ধ করে আয়ের পথ বন্ধ করে দিশাহারা করে দেয়। শুধুমাত্র নিজেদের অর্থের উঁচ্চ শিখরে পৌঁছার জন্য অন্যের নির্মান ভাঙ্গার জন্য হাত বাড়ায়। কোন দেশে সমাজে গরিব অভাবি মানুষদের সাহায্য করার জন্য দেশের সরকারের কাছ থেকে নিয়ে নামেমাত্র সাহায্য করে বাকী সবটা কারচুপি করে নিজের পকেট ভারি করে। এক দেশ আরেক দেশের ওপর যুদ্ধ চালাচ্ছে কিংবা প্রভাব খাটাচ্ছে দখলদারির জন্য। এভাবেই মানুষের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে লোভের মোহ নিদিষ্ট কোন দেশে না সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

যেখানে সেকেন্ডের আশা নেই সেখনে মানুষের এত চাহিদা এত অতৃপ্তি
পৃথিবীতে মানুষ চিরস্থায়ী নয় নির্দিষ্ট সময়ের সীমা অতিক্রম হলেই প্রত্যেককেই চিরবিদাই নিতে হয়। বিদায় নেওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয় এবং বাস্তবতার বাস্তব অবস্থান পাড় করতে গিয়ে অনেক অনেক জটিল মুহূর্ত অতিক্রম করতে হয়। কেননা মানুষ সংসার জীবনে নিরন্তন সংগ্রামে নিয়োজিত। এখানেই মানুষ কর্মপথ বেছে নেয় সেটা ভাল হোক আর মন্দই হোক। প্রকারভেধে মানুষের পছন্দ ভিন্নতা পায়। জগৎ সংসারে কেউ আলোতে কেউ অন্ধকারে বেছে নেয় জীবনের কর্ম পথ। যারা অতিলোভি তারাই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে জীবনে রশ্মি পেতে চায়, আর এই আশায় আশায় বিবেকের অবক্ষয় করে একদিন অন্ধকারে হারিয়ে যায়। যেখানে মানুষের স্থায়ীত্ব নেই এক সেকেন্ডের আশা নেই সেখনে মানুষের এত চাহিদা এত অতৃপ্তি অন্যের কাছ থেকে পাওয়ার লোভে অপরের দিকে হাত বাড়াতে লজ্জাবোধ করে না আত্মসম্মানে বাধে না। এই ব্যাধি দূত ছড়িয়ে পড়ছে মানবতার রক্তে।

বিশ্বের সর্বত্র আজ অবৈধ কার্যকলাপে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে
মানুষের জীবনের পথে অজস্র বাধা-বিপত্তি থাকে, থাকে অনেক সংকট। সে সংকট অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়। মানুষের জীবনে জটিলতা, বাধা-বিপত্তি আছে, থাকবে এসব অতিক্রম করতে হবে সফলতার সাথে। জীবনের পথে আছে প্রলোবন, আছে লোভ লালসা এসব জয় করেই পথ চলতে হয় কিন্তু বাস্তব জীবনে বাধা অতিক্রম করতে পারেনা লোভ জয় করতে পারেনা। ফলে কার্য উদ্ধার সহজ করার জন্য অন্যায় পথ অবলম্বন করাই উত্তম বলে অনেকে মনে করে। আবার লোভের বশবর্তী হয়ে অনেকে অন্যায় কাজে হস্তক্ষেপ করে। আর এভাবেই দিনের পর দিন মানুষের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অন্যায় পথে পরিচালিত হচ্ছে। সমাজব্যবস্থার মধ্যে এ ধরনের অনৈতিকতা এবং সততাহীনতা দিনে দিনে প্রসারতার বিস্তার লাভ করছে। নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় মানব জীবনে দেখা যাচ্ছে তার পরিণামে দুনিয়া আজ নীতিবোধহীন হয়ে পড়ছে। নৈতিকতার আদর্শ সমুন্নত না থাকার জন্য বিশ্বের সর্বত্র আজ অবৈধ কার্যকলাপে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। দূর্নীতি আর উচ্ছৃঙ্খলতায় সারা সমাজদেহ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। পরের সাহায্যে যে জীবন চলেনা তা যেন কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। এভাবে নৈতিক মূল্যবোধের অভাব মানব জীবনকে এক অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ক্ষয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের মানবতাবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মসম্মানবোধ!
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বিশ্ব যতটা উন্নতির উচ্চ শিখড়ে উপনিত হচ্ছে ঠিক ততটাই ক্ষয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষের মানবতাবোধ, আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মসম্মানবোধ! কিভাবে কেড়ে নেয়া যায়, কিভাবে ঠকানো যায় এ চিন্তাধারা মানুষের নৈতিক অবক্ষয় করে টেনে নামাচ্ছে পশুর কাতারে। এধরণের মানসিকতায় আক্রান্ত ব্যাধি হতে মুক্ত নাহলে আত্মমর্যাদাবোধ টনটনে না করলে মানুষ মানুষের তরে বিলিয়ে দিতে না পারলে পৃথিবীতে মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য আছে ভাবাকি ঠিক হবে?
কাঠের দুটো ক্র্যাচ বাসে ওঠানো আদর্শ্যের জন্য কষ্টকর তার উপর কতগুলো পেপার কেমন করে এই প্রতিবন্ধী বাচ্চা ছেলে বাঁচার তাগিদে সংগ্রাম করছে। আর যারা কাজ করার ক্ষমতা রাখে তারা কাজ না করে হাত পাতছে। আদর্শ্যকে সাহায্য করার জন্য একজন বৃত্তবানই যথেষ্ট। আমাদের দেশে আদর্শ্যকে সাহায্য করার মত বৃত্তবানের অভাব নেই, মানসিকতার অভাব আছে। মানুষমাত্রই হাত পাতার মনোবৃত্তি পরিহার করে, হাত বাড়িয়ে দেয়ার সংকল্প করতে হবে।



No comments:

Post a Comment