Pages

সুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল

সুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হলসুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হলসুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল







“পাপে বাপেরেও ছাড়ে না” এই প্রবাদ বাক্যটি মাঝেমধ্যেই আমাদের দেশে এত জোড়ালোভাবে প্রমাণিত হয় যা সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সুপ্রভাত তার একটি বর্তমান উদাহরণ। ১৯মার্চ ২০১৯ তারিখের আগ পর্যন্ত সুপ্রভাত পরিবহনের মালিকরা মানুষদের শোষণ করেছে, অমানবিক কষ্ট দিয়েছে আর দু’হাতে উজাড় করে অভিশাপ কুড়িয়েছে। মহৎ মানুষ উজাড় করে দু’হাত ভরে দেয় আর অসৎ
লোকেরা উজাড় করে দু’হাত ভরে কুঁড়ায়। সুপ্রভাতের মালিকরা সারা জীবন শুধু কুড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত একটি প্রাণের উছিলায় পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল।

সুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল

রোগ হলে ঔষধ খেতে হয় তা তিতো কিংবা মিঠা কিংবা টক-ঝাল যা-ই হোক না কেন নাকের ডগায় ধরে মুখে ঢেলে দেয়- খাবি না! না খেয়ে যাবি কই! বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের-ই হাতে-পায় চেপে ধরে ঔষধ খাওয়ানো হয়। টক-ঝাল অথবা তিতা-মিষ্টি যা-ই হোক না কেন জোর করে ঔষধ খাওয়ানোর মতো অবস্থা হয়েছে আমাদের দেশে, অবশ্য রোগ ছাড়াই। এ কথা বলা কারণ একটা কিংবা দু'টা নয়। আমাদের দেশে সর্বক্ষেত্রেই জোর করে ঔষধ খাওয়ানো হয়।

এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে বেশ অনেক বছর আগে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় "বলতে চাই" বিচারে পড়েছিলাম একজনের কিছু বলা কথা- তিনি বলেছিলেন একদিন তাঁর চাচাতো না খালাতো (আমার ঠিক মনে নেই) বোনের বাসায় বেড়াতে আসেন। এসে দেখেন বোনের স্বামী মানে দুলাভাই বোনকে ভীষণ ভালোবাসে। দুলাভাই বোনকে এত আদর-যত্ন করতো যে প্রতি রাতে বোনকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বোনকে ঘুম পাড়িয়ে রাখত। ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো বিষয়টা বেড়াতে আসা বোনের খটকা লাগে তাই বিষয়টা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল; কেন প্রতি রাতেই একজন সুস্থ মানুষকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে। বোনের সাথে ঘুমের ব্যাপারে আলোচনা করে, মানে ঘুম কেমন হয়, ভাল ঘুম হয় কিনা, ঘুম হাল্কা না পাতলা ইত্যাদি জানার চেষ্টা করে। বোন তাকে জানায় কোন সমস্যার জন্য নয়, সারাদিন বাসায় ঝুট-ঝামেলা পোহাতে হয় তাই রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়। ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে স্ত্রীর কাছে খুব ভালো স্বামী বনে যায়। কিন্তু বেড়াতে আসা বোন এটা একটা রহস্যজনক ব্যাপার ভাবে, কেননা বাসায় স্বামী-স্ত্রী ওরা দু'জন আর বুয়া ছাড়া অন্য লোক নেই, কাজও তেমন না। তাই রহস্য বের করার চেষ্টা চালায় এবং সফল হয়। দুলাভাই বোনকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে গৃহপরিচারিকার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে।এই ছিল বোনের প্রতি দুলাভাইয়ের অপ্রকাশিত গভীর ভালোবাসা।

এমনি ভাবে আমাদের দেশের জনগণ ভালোবাসা পায় ঊর্ধ্বতন সকল মহল-প্রশাসন-সরকারের কাছ থেকে। এমন ভালোবাসায় কারোর কোন খটকা লাগে, মাথায় ঘুরপাক খায় না কেননা, এসব দেখার শোনার এবং প্রতিবাদ কিংবা প্রতিকার করার কেউ নেই। আছে শুধু শোষণ করার এবং শোষিত হওয়ার প্রবণতা। বিগত প্রায় এক যুগের উপরে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি শোষিত হচ্ছে ট্রান্সপোর্ট মালিকদের শোষণে।
সুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হলসুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হলসুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল









আমি রামপুরা ডিআইটি রোডের ট্রন্সপোর্ট সার্ভিসের পিছনের কিছু ইতিহাস টেনে আনছি। এই রোডের আধুনিক ট্রান্সপোর্টের শুরু থেকেই জনগণকে শোষণ করে আসছে বাস মালিকরা। বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরতেই পিছনের ইতিহাস টানা। শুরুটা করছি তখনকার একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে, বিগত (১৬-০৬-২০০৩ইং)রামপুরায় অনাবিল বাস কাউন্টারে বাসে উঠার জন্য লাইনে দাঁড়াই। আমি কাউন্টারের পিছনের দিকে বেশ কিছুটা পিছনে দাঁড়ানো, কাউন্টারের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা আমার পরিচিত একটি মেয়ে আমাকে বলছে দেখছ, আমি বললাম কি? ও বলল ভাড়া বাড়িয়েছে, আমি আর কিছু বলিনি। এক/দু'জন করে বাসে উঠে যাওয়াতে আমি লাইনের সামনের দিকে আগাতে লাগলাম এক পর্যায়ে টিকেট কাটার সুযোগ হলো তখন দেখলাম আগামী ১৭-০৬-২০০৩ইং তারিখ থেকে অনাবিলের ভাড়া রামপুরা থেকে মালিবাগ ৫ টাকার পরিবর্তে ৬ টাকা, রামপুরা থেকে কমলাপুর-মতিঝিল ৬ টাকার পরিবর্তে ৭ টাকা করা হলো। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে হতবাকই হলাম। আমার মত সব যাত্রীদের একই অবস্থা। হতবাক হওয়া ছাড়া তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও দু-একজনকে নিরাশ সুরে বলতে শোনা গেল বিআরটিসি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে অনাবিল ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁরা (যাত্রীরা) বলছেন বাসে দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছি না, বাসে উঠতে পারছি না, এটা দেখছে না! তারা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু তো যাত্রীদের বলার নেই। কারণ যাত্রীরা জানে কোন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস কার! এটা হয়তো অনেক প্রশাসন বা উচ্চ মহল জানে না, কেননা তারা তো কখনো বলে না এ সার্ভিস এই মন্ত্রীর ঐ সার্ভিস অমুক নেতার, তাই বলে কি যাত্রীরা চুপ? না, তারা ঠিকই বলে আর মুখ ভেংচিয়ে তিতো ঔষধ গিলে।

ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দেশে প্রচার করা হয় ওমোক নিয়ম-নীতি-আইন করা হয়েছে, ভঙ্গকারীর জন্য তুমোক শাস্তির বিধান রয়েছে। আইন কারো ব্যক্তি মালিকাধীন কল-কারখানার উপকরণ নয় ইচ্ছা মত প্রয়োগ করবেন। আইন সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে সাগরের ঢেউয়ের মত নিজস্ব গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। হ্যাঁ, সবই আপন গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে বলেই হুট করে রামপুরা সড়কের মতিঝিল টু উত্তরা ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস বিআরটিসি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একবারও ভাবেনি জনগণের দুর্ভোগের কথা। আর এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে নারাজ অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস, তাই তো সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মুনাফা। কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে না, যাত্রীদের দুর্ভোগের অবসান করতে হচ্ছে না, তাহলে বাধা কোথায়?

ইচ্ছে হলো তো ভাড়া বাড়াবো, প্রতিযোগিতা হলো তো কমাবো, কার কী বলার আছে? আছে কি এসবের কোন নিয়ম-নীতি? আছে কি দেখার কেউ? না নেই(!) যদি থাকতো তা হলে রামপুরা থেকে গুলিস্তানের সাধারণ সিটিং বাসের (সিটি বাসের) ভাড়া ১০টাকা হত না। ৬ টাকা থেকে এক চমকে ১০ টাকা কিভাবে হয়!মতিঝিল হতে রামপুরা ১৬-০৬-২০০৩ইং তারিখ পর্যন্ত ৬ টাকা আবার মতিঝিল হতে এয়ারপোর্ট, টঙ্গী ব্রিজ, উত্তরা পর্যন্ত ১০ টাকা কিভাবে হয়! এখন (১৭-০৬-২০০৩ইং) ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা। শোনা যায় রামপুরা সড়কের স্পেশাল দুই সার্ভিসই (আবাবিল, সিটি বাস) দুই শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর মন্ত্রীর। এরই মধ্যে একটি (সিটি বাস) সার্ভিস নাকি যোগাযোগ মন্ত্রীরই। এতে কি বুঝা যায়? (তখনকার সময়ের কথা)

কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া রেট কত লোকাল কিংবা স্পেশাল। কিলোমিটার প্রতি কোন সার্ভিসের ভাড়া কত হবে এর কোন নির্ধারিত রেট কি আমাদের দেশে আছে? যদি থাকে তাহলে কিভাবে এই সার্ভিসগুলো ইচ্ছামত হুট-হাট ভাড়া নির্ধারণ করছে। রেট থাকলে তো ইচ্ছা মতো বাড়ানো-কমানোর কথা নয়। প্রশ্ন তো এখানেই! স্পেশালে সার্ভিসের ভাড়া একটু স্পেশাল হবে তা জনগণ জানে, তেমনি জানে স্পেশাল সার্ভিসের ভ্রমণও একটু স্পেশাল হবে। সিটিং সার্ভিস ফিটিং হবে, ভাড়া স্পেশাল থাকবে একোন আজব দুনিয়ায় আমরা বসবাস করছি। এসব দেখার কি কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নেই? তখনও ছিল না আজও নাই।

এতো গেল ভাড়ার কথা। এবার আসি বস্তা ভরার কথায়। রামপুরা, বাড্ডা এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বহু বছর আগেই। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। দিনের পর দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা। লোকাল সার্ভিস (১০নম্বর) কিংবা অবাবিল, বিআরটিসি কিংবা সিটি বাস সবগুলোরই একই অবস্থা। বস্তায় কোন কিছু ভরার পর বস্তাটা ঝাঁকানো হয় কিছুটা ফাঁকা হলে আবার বস্তাতে কিছু ভরা হয়, আবার ঝাঁকানো হয় আবার ভরা হয়, এমনি করে বস্তায় যতক্ষণ ধরে ততক্ষণই ভরতে থাকে। ঠিক একই ভাবে বাসগুলো একেকটা স্টেশনে ঝাঁকানো হয় আর যাত্রী ভরা হয়।

দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যথা হয়ে যায় কিন্তু বাসে উঠা যায় না। ডাবল ডেকার ছিল উঠে গেছে, আবাবিল এবং সিটি বাস চালু হওয়ার পর বিআরটিসি ডাবল ডেকার উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? এ রোডে বিআরটিসি চালু হওয়ার পর থেকেই ডাবল ডেকার সার্ভিস দিয়ে আসছে। আবাবিল চালু হওয়ার আর ডাবল ডেকার বন্ধ হওয়া এই দুইয়ের মধ্যে কি কোন যোগসূত্র লুকায়িত নেই? এই প্রশ্ন প্রতিটি যাত্রী মাত্রেরই। কারণ বিআরটিসি কিছুদিন বন্ধ থেকে আবার চালু হয়েছে, কিন্তু বাসের সংখ্যা খুবই কম এবং লক্কড়-ঝক্কর মার্কা। এ প্রসঙ্গে একদিন কথা হয় লাইনের দাড়িয়ে থাকা যাত্রীদের সাথে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের এক ভদ্রলোকের। প্রসঙ্গক্রমে অনেক কথাই হয়। আমি ভদ্রলোককে বললাম ডাবল ডেকার বন্ধ করে দিলেন কেন? উত্তর দিলেন নারায়ণগঞ্জ রোডে নিয়ে গেছে, আমি আবার জানতে চাই এই রোড থেকে উঠিয়ে নারায়ণগঞ্জ রোডে দিবে কেন? আপনারা আবার চালু করুন, উত্তর দিলেন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস থেকে অনুমতি দেয় না। আমি তাঁকে বলি ডাবল ডেকারগুলো ভাগ করে দুই রোডেই চালালে ভালো হতো না। উত্তর পেলাম অনেক চেষ্টা করেছি, কাজ হয় না। তুরাগ কিছু দিন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কিছু বাস মতিঝিল হয়ে চলাচল করত তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এমনি করে যদি হুটহাট করে সার্ভিস বন্ধ করে দেয় তাহলে জনগণের কি অবস্থা হয় কর্তৃপক্ষ একবারও ভেবে দেখেন না।
সুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল

দেশের জনগণের কি অবস্থা দেখার দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে যাবে কেন? তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলেই যত সমস্যা, তারা তো তাদের পাওনা ঠিক মতই পাচ্ছে। রাজধানীর এমন কোনো সড়ক পাওয়া যাবে না লোকাল এবং স্পেশাল ডাবল ডেকার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস নাই। কেন জানিনা রামপুরা ডিআইটি রোডে এসব গাড়ির কোন হাদিস মেলে না। ভলভো দু'দিন সার্ভিস দিয়েছিল লজ দেখিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, বিআরটিসিরও একই অবস্থা। লস কেন হচ্ছে? ব্যক্তিমালিকানায় তো হচ্ছে না। এটা তলিয়ে দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের, জনগণকে ভোগান্তির শিকারে পরিণত করা কোন জাতির পরিচালকদের উচিত নয়। অথচ তাই করছে সব সরকারের মন্ত্রী-এমপি, নেতা-পাতিনেতারাই!কারণ সমস্ত কাজকর্মের ভাল-মন্দের নীতি নির্ধারণ যখন তারাই করেন গণ-ভোগান্তির নীতি তো অন্যেরা এসে নির্ধারণ করবেন না। তাই তো জাতির এই দুর্দশা, ভোগান্তি জনগণের।

এসব স্বেচ্ছাচারিতা রুখবার কেউ নেই। সরকার না বুঝার, না জানার বাহানা করতে পারেন, জনগণ কিন্তু তারপরও সরকারের দিকে ভেজা চোখে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।যদি কোন দিন সবকিছু খোলা মনে পরখ করে জনগণের সেবায় এগিয়ে আসেন, একমাত্র সেই প্রতীক্ষায়। সরকারকে বলার কিছুই নেই, কেননা, "জনগণের জন্যই সরকার, সরকারের জন্য জনগণ নয়।" রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই সংজ্ঞাটা আমাদের দেশের সব সরকারেরই মুখস্থ।

ঢাকায় মুড়ির টিন দিয়ে পাবলিক বাসের যাত্রা শুরু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এ অঞ্চলে মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত ট্রাকগুলোর বাইরের দিকে কাঠের বডি বদল করে ওপর টিন দিয়ে মুড়িয়ে বাসের আদল দিয়ে বানানো হয় বাস; যার নাম রাখা হয় মুড়ির টিন। এই মুড়ির টিন নামকরণের আরো নানা রকম ব্যাখ্যা আছে আমি সেই দিকে যাচ্ছি না। কেননা আমার বিষয় রামপুরা ডিআইটি রোডে সুপ্রভাতের রাজত্ব আর যখন-তখন ট্রন্সপোর্টের আবির্ভাব এবং বিলুপ্ত। প্রায় ২০ বছর আগেও ঢাকার রামপুরা রোডে বীর-দর্পে চলাচল করতো মুড়ির টিন। জনগণ মুড়ির টিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাতায়াত করত, তখনকার সময় অনুসারেই তুলনামূলকভাবে মুড়ির টিনে যাতায়াত করতে পয়সাও গুণতে হত কম। আমার যতটা মনে পড়ে ১৯৯৮/১৯৯৯ সালের দিকে রামপুরা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া দিতাম আটআনা (৫০ পয়সা), তখন আমার কর্মস্থল ঐখানে থাকায় প্রতিদিন এইটুকু পথ যাতায়াত করতাম। মুড়ির টিনে সর্বোচ্চ ভাড়া দিয়েছি দেড় টাকা (১.৫০টাকা) তখন মিনিবাস ট্রন্সপোর্টের আবির্ভাব হয়, রামপুরা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত নতুন অবস্থায় মিনিবাসের ভাড়া ছিল ১.৫০ টাকা, কিছু দিন পরেই ৩টাকা করে ফেলে শুরু হয় বাসের ভাড়া বাড়ানো। তারপর থেকে বাস ভাড়া রি-ডবল হারে ভাড়ছে তো ভাড়ছেই।

মিনি বাসের আবির্ভাবের পরপরই বিলুপ্ত হয়ে গেল মুড়ির টিন, মিনি বাস কালক্রমে নানান নাম পরিবর্তিত হয়ে শেষ পর্যায় “সুপ্রভাত” নাম দিয়ে আকিকা দেয়া হল। সেই থেকে ১৯ মার্চ ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত সুপ্রভাত রামপুরা ডিআইটি রোডে রাজত্ব করে গেল। এই সুপ্রভাতের খবরদারির দাপটে অন্য কোনো ট্রন্সপোর্ট সার্ভিস এই রোডে হাটতে পারতো না, কখনো কখনো কেউ সাহস করে সড়কে নামলেও পা গুটিয়ে চলে যেতে হয়েছে। এমন কি ৬-নম্বর বাসও সুপ্রভাতের থাবার শিকার ছিল, কিছুতেই চলাচল করতে পারলনা রামপুরা রোডে। রামপুরা রোডের জনগণের যাতায়াতের দুর্ভোগ শেষ সীমানায় পৌঁছালে মাননীয় এমপি একেএম রহমত উল্লাহ ওনার তত্ত্বাবধায়নে সুপ্রভাতের প্রথম দিকের আমলে প্রথম বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করেন কিন্তু বেশি দিন টিকতে পারেনি, বন্ধ হয়ে গেল বিআরটিসি বাস সার্ভিস। বিআরটিসি বাস সার্ভিস চলাকালীনই শুরু হয় আবাবিল, আবরার, অনাবিল, নাগরিক নামে ট্রন্সপোর্ট সার্ভিস। এই বাসগুলো রাজারবাগ রোড দিয়ে মতিঝিল শাপলাচত্বর পর্যন্ত যেত, বাসগুলো কিছু দিনের ব্যবধানে রোডে নামে। এই বাসগুলো চলাচলের মেয়াদ ছিল মোটামুটি কয়েক বছর, সরকার বদল হওয়ার পর এই বাসগুলো একটার পর একটার বিলুপ্ত হয়ে যায়; আবির্ভাব হয় বিভিন্ন নামে নতুন নতুন বাস। রামপুরা ডিআইটি সড়কে বিআরটিসি ডাবল ডেকার সার্ভিস আবারও চলছে জানিনা কত দিন চলবে?

ভলভো, আবাবিল, আবরার, অনাবিল, নাগরিক, সিটি বাস, তুরাগ, ট্রান্স সিলভা, ফাল্গুন, দিবানিশি, শতাব্দী, একুশে, অনিক, বন্ধু পরিবহন ইত্যাদি বাস সার্ভিস। এই ট্রন্সপোর্টগুলো একসাথে চলাচল করেনি, সরকার বদলের সাথে সাথে ট্রন্সপোর্টও বদল হয়েছে। ২০০৩-২০০৯ সালের দিকে এবং পরেও রামপুরা রোডে আরও কিছু ট্রন্সপোর্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে কিছু দিন চলাচল করে বিলুপ্ত হয়ে যায়, বাসগুলোর নাম কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। আবারও চলছে ডাবল ডেকার রামপুরা ডিআইটি রোডের, সার্ভিসটি আগের মত বিলুপ্ত হয়ে যাবে না তো?

শুধুমাত্র সিটি বাস সুপ্রভাতের সাথে পাল্লা দেয়, ফাল্গুন, দিবানিশি, একুশে ও অনিক বাদ দিয়ে বাকি সব বাস মতিঝিলের, রাজারবাগ, ফকিরাপুল কিংবা পল্টন হয়ে দৈনিক বাংলা দিয়ে চলাচল করত আর তুরাগ ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। অবশ্য দিবানিশি অন্তিম সময় পার করে রাজারবাগ দিয়ে মতিঝিলে। সিটি বাসই গুলিস্তানে চলাচল করত, তখন লোকমুখে শোনা যেত সিটি বাস তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সাহেবের তাও টিকতে পারেনি সুপ্রভাতের তুপে। একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেল রামপুরা রোডের ভলভো, সিটি বাস, আবাবিল, আবরার, নাগরিক, ট্রান্স সিলভা, ফাল্গুন, দিবানিশি, একুশে, শতাব্দী ও বন্ধু পরিবহন এবং নাম মনে না পরা আরও কিছু পরিবহন। অনাবিল এখনও বর্তমান তবে পরিবর্তিত হয়েছে রোডসহ সবই আর তুরাগ স্থায়ী হল এক রোডে কিন্তু বাহানা কম করেনাই কখনও ফিটিং কখনও সিটিং।

হঠাৎ-ই একদিন সুপ্রভাত লোকাল সার্ভিস থেকে সিটিং সার্ভিস হয়ে গেল, মানুষ পরে গেল ভোগান্তিতে একদিকে বাসে ওঠতে না পারা অন্য দিকে ডবল ভাড়া। আশ্চর্যজনক হলেও বাস্তবতা সত্যি, মাত্র এক রাতের ব্যবধানে হঠাৎ করে যদি যাতায়াত খরচ ডাবল হয়ে যায় তখন মানসিক অবস্থা কেমন হয়; এক রাতের ব্যবধানে কারোর আয় ডবল তো কল্পনার বাইরে কিঞ্চিতও তো বাড়েনা। কারো কারো আয় ১০ বছরেও ডবল হয় না। গণ-বসতি এলাকার সড়কে সুপ্রভাত এই যে সিটিং শুরু করল এরপর থেকে তুরাগ ছাড়া রামপুরা সড়কে ১০ টাকার নিচে কোন বাসের ভাড়া নাই, বাসে ওঠলেন তো ১০ টাকা গুনলেন। সন্তানের মুখে খাবার স্কুলের বেতন দিতে পারেন আর না পারেন বাসের ভাড়া দ্বিগুণ-তিনগুণ দিতেই হবে; আমাকে-আপনাকে!
সুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হলসুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হলসুপ্রভাতকে পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল








মালিবাগ চৌধুরী পাড়া ফ্লাইওভারের গোঁড়া থেকে শান্তিনগরের মোর ফ্লাইওভার দিয়ে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ২-৩ মিনিট মানুষের ভাড়া গুণতে হত ১০ টাকা আবার শান্তিনগর থেকে কেউ বিজয়নগর যায় তাহলে তাঁকেও গুণতে হত ১০ টাকা, কখনও কখনও সিটিং সার্ভিসের ১০ টাকার দূরত্বে সিট প্রতি যাত্রী ৩বার বা তারও অধিক বার বদল হয়, কেননা বাসে ওঠলে আর নামলেই ১০ টাকা। রামপুরা থেকে বিজয়নগর মোর বা একটু সামনে সুপ্রভাতের চেকার পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা এই দূরত্বটুকুতে ২বারই ধরলাম তাহলে সদরঘাট টু গাজিপুরা পর্যন্ত ১০ টাকার দূরত্ব যদি এমনি করে যাত্রী বদল হয় তাহলে কিলোমিটার অনুসারে সদরঘাট টু গাজিপুরা পর্যন্ত সিট প্রতি কত টাকা আদায় করছে বাস মালিকেরা। পরোক্ষভাবে এমন করেই মানুষ শোষণ করছে সব বাস মালিকেরাই।

“পাপে বাপেরেও ছাড়ে না” এই প্রবাদ বাক্যটি মাঝেমধ্যেই আমাদের দেশে এত জোড়ালোভাবে প্রমাণিত হয় যা সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, সুপ্রভাত তার একটি বর্তমান উদাহরণ। ১৯মার্চ ২০১৯ তারিখের আগ পর্যন্ত সুপ্রভাত পরিবহনের মালিকরা মানুষদের শোষণ করেছে, অমানবিক কষ্ট দিয়েছে আর দু’হাতে উজাড় করে অভিশাপ কুড়িয়েছে। মহৎ মানুষ উজাড় করে দু’হাত ভরে দেয় আর অসৎ লোকেরা উজাড় করে দু’হাত ভরে কুঁড়ায়। সুপ্রভাতের মালিকরা সারা জীবন শুধু কুড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত একটি প্রাণের উছিলায় পাপের কাছে ধরা পড়তেই হল। তাতেও তাদের মানবতায় মনুষত্ববোধের শিক্ষা জাগ্রত হবে না ফিরবেনা পাপের পথ থেকে।

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া ফ্লাইওভার পার হতে কিংবা বাসে পা দিলেই যখন ১০ টাকা দিতে হয়েছে বা হচ্ছে তখন ভিতরের কষ্টে ছেয়ে যায় সারা দেশের আকাশ বাতাস। বর্তমানে বাসে পা দিলেই বাসের নাম ভেদে গুণতে হয় ১০, ১৫, ২০ টাকা। যেসব বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০, ১৫, ২০, --,--, ইত্যাদি টাকা এই সব বাসগুলো গুণগত মান একই শুধু নাম ভিন্ন আর পার্থক্য কেবল ভাড়ায়। কর্ণধর, ক্ষমতাধর আর অর্থধররা যে যেভাবে পারছে সাধারণ মানুষগুলোকে কেবলই শোষণ করে-ই যাচ্ছে।

ঢাকার সব সড়কে সব বাসেই চলছে একই নৈরাজ্য। ভাড়ার মাধ্যমে মানুষ শোষণ করছে সব বাস মালিকেরাই আর শোষনকৃত গুপ্তধনে ভাগ বসান সরকার-তন্ত্রের আমলাতন্ত্ররা। ভাবলে অবাক লাগে আমরা পৃথিবীর এমন এক অদ্ভুত আজব দেশের নাগরিক।



(মুড়ির টিন ও সুপ্রভাত বাসের ছবি সংগৃহীত)




No comments:

Post a Comment