বিশ্ববাজারে নরসিংদীর কলম্বো লেবুর জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার কলম্বো লেবু এখন রপ্তানিকারক ফসল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ হাজার টন কলম্বো লেবু রপ্তানি করা হয় আর এতে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। দিন দিন বিশ্ব বাজারে নরসিংদীর কলম্বো লেবুর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। চাহিদা থাকায় নরসিংদীতে কলম্বো লেবুর চাষ ক্রমান্বয়ে বেড়েই যাচ্ছে তাতে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের
পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের অর্থনীতিতে নরসিংদীর কাপড়, সব্জি ও লটকন ফলের মত কলম্বো লেবু ফলও বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। উৎপাদিত বৈদেশিক বাণিজ্যিক ফসলের দিকে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে কেননা, যেসব ফসলের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসে ঐ সব ফসলের দিকেই নজরটা অনেকটাই বেশি দিতে হবে। আর এই জন্য কৃষকদের সব রকম সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে সরকারকেই। তাহলেই দেশ ও কৃষক উভয়েই বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা আর্থিক লাভবান হবে, উন্নত হবে দেশ তথা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা।
পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের অর্থনীতিতে নরসিংদীর কাপড়, সব্জি ও লটকন ফলের মত কলম্বো লেবু ফলও বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। উৎপাদিত বৈদেশিক বাণিজ্যিক ফসলের দিকে সরকারকে আরও নজর দিতে হবে কেননা, যেসব ফসলের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসে ঐ সব ফসলের দিকেই নজরটা অনেকটাই বেশি দিতে হবে। আর এই জন্য কৃষকদের সব রকম সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে সরকারকেই। তাহলেই দেশ ও কৃষক উভয়েই বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা আর্থিক লাভবান হবে, উন্নত হবে দেশ তথা দেশের মানুষের জীবনযাত্রা।
ভিন্ন স্বাদের কলম্বো জাতের লেবু শুধু যে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানিই হচ্ছে তা নয়, সবখানেই এই লেবু ব্যাপকভাবে খ্যাতি অর্জন করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এখন নরসিংদীর কলম্বো লেবুর দখলে। মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সারা বছর নরসিংদীতে এই লেবু ফলটি ব্যাপকহারে চাষ করা হয়, কলম্বো জাতের লেবু স্বাদে-গন্ধে সত্যি একেবারেই অন্যরকম। না খেলে কলম্বো লেবু স্বাদ বলে বুঝানো যাবে না; হলফ করে বলতে পারি একবার এই লেবু খাইলে অন্য লেবুতে কখনোই তাঁর মন ভরবে না।
মানুষের কাছে লেবুর কদর নিত্যদিন তাই এর চাহিদাটাও প্রতিদিনের আর কলম্বো লেবুর ফলনও হয় ১২ মাস বিক্রিও হয় ১২ মাস। নরসিংদীর কলম্বো লেবু বাগানে গাছের ছোট-বড় সব ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় লেবু। ভরা মৌসুমে ভাল ফলন হলে গাছ প্রতি প্রায় ৫০০ পর্যন্ত লেবু হয়ে থাকে। অবিশ্বাস্য কিংবা আশ্চর্যজনক মনে হলেও নরসিংদীতে কলম্বোর লেবু ফলের ফলন এমনই হচ্ছে তাই অতি-উৎসাহিত হয়ে কৃষকরা কলম্বোর চাষ করছে।
সুগন্ধযুক্ত কলম্বো লেবুর গুণেই কলম্বো লেবু এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে পরিচিতি লাভ করছে বিশ্ব বাজারে। বর্তমান বিশ্ব বাজারের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দখল করে নরসিংদীর কলম্বো লেবু ফল। প্রায় ১৬ বছর আগে স্থানীয় কৃষি বিভাগ নরসিংদী জেলার মাটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় কলম্বো লেবু চাষের জন্য এই জেলার মাটি এবং আবহাওয়া খুবই উপযোগী। এরপর থেকে কলম্বো লেবুর চাষ শুরু হয় নরসিংদীতে। বর্তমানে নরসিংদীর সব জেলাতেই এই লেবুর চাষ হচ্ছে তবে মনোহরদী, বেলাবো, রায়পুরা এবং শিবপুরে বাণিজ্যিকভাবে কলম্বো জাতের লেবুর ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের শুধুমাত্র নরসিংদী জেলাতেই এ লেবু ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়।
সারা বছর ফলন ধরে, ফলন ভাল পাওয়ায়, আশানুরূপ দাম পাওয়ায় এবং রপ্তানিকারক ফসলে পরিণত হওয়ায় নরসিংদীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে কলম্বো লেবুর চাষ। দেশ ও বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বাড়ার ফলে দিন দিন লেবু চাষে প্রতি এখানকার কৃষকদের আগ্রহও বেড়েই চলছে। নরসিংদীতে নতুন নতুন কলম্বো লেবুর বাগান তৈরি ও পুরাতন বাগান ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উপকরণ বিতরণ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এই অঞ্চলের কৃষকরা লেবু চাষ করে তাদের আগের জীবন-যাত্রার মান বদল করে উন্নত গড়তে সক্ষম হচ্ছে।
বাংলাদেশে যতরকম জাতের লেবু উৎপন্ন হয় কলম্বো লেবু অন্যান্য সব জাতের লেবুর তুলনায় স্বাদে ও গন্ধে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কলম্বো লেবু আকারে বড়, সুগন্ধযুক্ত, বেশ রসালো, অন্য জাতের লেবুর তুলনায় টক অনেকটা কম এবং অন্য জাতের লেবুর বাকলের মত তিতা না। আমাদের দেশে যতরকম লেবু আছে তারমধ্যে কলম্বো লেবু ও লেবুর খোসা বা বাকল খেতে সবচেয়ে সুস্বাদু। এই লেবু ফল ঘন-সবুজ, বাকল পুরু এবং বীচি নেই বললেই চলে।
নরসিংদীর বিখ্যাত কলম্বো লেবুর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বেড়েই যাচ্ছে বিশ্ব বাজারে, রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। কলম্বো লেবু নরসিংদী তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান বয়ে আনতে সক্ষম। কেননা, এই লেবু রপ্তানিকারক ফসলে পরিণত হয়েছে, ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভুক্ত দেশে ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলম্বো লেবু রপ্তানি হচ্ছে। নির্দ্বিধায় বলা যায় নরসিংদীর কলম্বো লেবু এখন বাংলাদেশের লাভজনক রপ্তানিকারক ফসল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন সময়ে নরসিংদী জেলায় কলম্বো জাতের লেবুর বাগান পরিদর্শন করে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। সুস্বাদু ও রোগমুক্ত হওয়ার কারণে প্রতিনিধি দল লেবু কেনার জন্য আগ্রহী হন। এরপর থেকেই নরসিংদীর কলম্বো লেবু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি শুরু হয় এবং দিন দিন এই লেবুর চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। বাগান থেকে দেশের পাইকাররা লেবু কিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভুক্ত দেশগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলম্বো লেবু রপ্তানি করে থাকেন। এই লেবু রপ্তানিকারক ফসল হওয়াতে নরসিংদীর কৃষকদের ভাগ্য ফিরছে কলম্বো লেবু চাষ করে; তাদের কাছে এই লেবু অনেকটা আশীর্বাদ স্বরূপ।
নরসিংদীর কাপড়, ফল (কলা ও লটকন) ও সব্জির খ্যাতি সারা দেশজুড়ে; যুক্ত হল আরেকটি ফল যা নাম কলম্বো লেবু। এদের সবার খ্যাতিই পাড়ি দিয়েছে দেশ ছেড়ে বিদেশে। মনোহরদী, শিবপুর, বেলাবো ও রায়পুরায় এই ৪টি জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে কলম্বো জাতের লেবুর চাষ করা হচ্ছে। প্রায় দেড় হাজার চাষি এই লেবু চাষের সঙ্গে জড়িত। অধিদপ্তরের সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে লেবু চাষিরা লেবু উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা নিয়ে সিআইজি নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে লেবু কিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন। বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে কলম্বো লেবু ক্যানকার মুক্ত হওয়ায় তারা বিধি-নিষেধ আরোপ করেনা।
বিশ্বব্যাপী লেবুর নানা রকম কদর রয়েছে, কদর শেষ নাই খাদ্য, সাবান, শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীতে। লেবুর রস স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পানীয়। লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড যা দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া অল্প পরিমাণে আছে প্রোটিন, কোলেস্টেরল, কার্বোহাইড্রেট, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। লেবুর রস দেহের মেদ বা চর্বি কমাতে, দেহ গঠন ও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং লেবুর বাকল হজমশক্তিতে বেশ কার্যকর। কলম্বো লেবুর বাকল বা ছাল সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে উদ্বায়ী (volatile) তেল তৈরি করা হয়। উদ্বায়ী (volatile) তেল বা লেবুর তেল বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, সিসিলি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রসাধনী ও ঔষধের সুগন্ধের উপাদান হিসেবে এই তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
No comments:
Post a Comment