Pages

তাই বলে রমনার অশ্বত্থ বটমূল হবে!


তাই বলে রমনার অশ্বত্থ বটমূল হবে!






তাই বলে রমনার অশ্বত্থ বটমূল হবে!


১৬১০ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে বাংলার সুবাদার ইসলাম খাঁর হাত ধরে রমনা বাগানের যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল রমনার পরিসীমা। পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে নিয়ে বর্তমান সড়ক ভবন পর্যন্ত মোঘলরা বাগান তৈরী করেছিলেন। মোগলরা তখন এই বাগানের নাম দিয়েছিলেন “বাদশাহি বাগান” বা “বাগ-ই-বাদশাহি”।
রমনার নামকরণ পরবর্তীতে মোঘলরাই করেন।

আঠারো শতকের প্রথম দিকে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করা হলে রমনাও সৌন্দর্য হারাতে শুরু করে, ধীরে ধীরে পরিণত হয় জঙ্গলে। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর রমনার জৌলুস ও সৌন্দর্য হারিয়ে কোম্পানি আমলে রমনা হয় জঙ্গল। রমনা জঙ্গল অবস্থায় ছিল ১৮২৬ সাল পর্যন্ত। ১৮২৬ সালেই রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজে ঢাকা জেলের কয়েদিদের ব্যবহার করেন, কাজ শেষ করতে প্রায় তিন মাস লাগে। ফিরিয়ে আনা রমনার জৌলুস বেশি দিন ধরে রাখতে পারে নাই আবারও রমনা বিরানভূমিতে পরিণত হয়।

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর রমনার উন্নয়ন আবার শুরু হয় এবং নতুন সাজে তৈরি হলো ‘রমনা পার্ক’। লন্ডনের কিউই বোটানিক গার্ডেনের কর্মী মি. রবার্ট লুই প্রাউডলকের তত্ত্বাবধায়নে ১৯০৮ সালে রমনাসহ ঢাকা শহরে নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন এবং শেষ করেন ১৯২৮ সালে। নিসর্গ পরিকল্পনার উন্নয়ন কাজ শেষ করতে সময় লাগে প্রায় ২০বছর। তিনি এই এলাকায় উদ্যান সৃষ্টির জন্য ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। মি. রবার্ট লুই প্রাউডলক দেশীয় ও বিদেশি গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছ লাগিয়ে চমৎকার এক নিসর্গশোভায় রমনাকে সাজিয়ে তুলেন। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী রমনা পার্কে নানা প্রজাতির প্রায় ৫০০০ গাছ আছে; ৭১ প্রজাতির ফুল গাছ, ৪১ প্রজাতির বনায়ন, ৩৬ প্রজাতির ফল গাছ, ৩৩ প্রজাতির ঔষধি গাছ এবং ১১ অন্যান্য প্রজাতির গাছ আছে।
রমনা পার্ক শুরু হয় ১৯০৯ সালে। ধারনা করা হয় সূচনালগ্ন কিংবা তার কিছু পরেই রমনা পার্কের পরিকল্পনাবিদ মি. আর. এল. প্রাউডলকের তত্ত্বাবধানে এই পার্কে রোপণ করা হয়েছিল এই অশ্বত্থ গাছটি। মনে করা হয়, তখনকার সময় পরিকল্পিতভাবেই অশ্বত্থ গাছটি লাগানো হয়েছিল। সাধারণত অশ্বত্থ গাছ প্রায় ১৫০-২০০ বছর বেঁচে থাকে। রমনার অশ্বত্থ গাছটি পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রোপণ করা হয়, যে গাছটি কালক্রমে খ্যাতি লাভ করে “রমনার বটমূল” নামে।
তাই বলে রমনার অশ্বত্থ বটমূল হবে!
রমনা পার্কে যে গাছ তলাটিতে ছায়ানটের আয়োজনে প্রতিবছর বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উৎযাপন করা হয়, সে গাছটির প্রচলিত নাম “রমনার বটমূল”। কিন্তু অনেকেই জানেন গাছটি ‘অশ্বত্থ গাছ’ ‘বট গাছ’ না; তবুও কেন একটি অশ্বত্থ গাছের অস্তিত্বটাই বিলীন হয়ে গেল! কেন অশ্বত্থ পরিচিতি পেল বট হিসেবে!

রমনায় বট গাছ নেই তবুও কেন হল “রমনার বটমূল”, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা যায় সাধারণ মানুষ সাধারণত অশ্বত্থ গাছ ও বট গাছের পার্থক্য তেমন একটা বোঝে না, অশ্বত্থ গাছকে বট গাছ হিসেবে চিনে তাই এর ছায়াময়, প্রশান্তি, বিস্তৃত ক্যানভাস এবং বিশালতা বোঝানোর জন্যই বট গাছ নাম ব্যবহার করে অশ্বত্থ গাছটাকে আড়াল করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে প্রথম খোলামেলা পরিবেশে বাংলা বর্ষবরণ উদযাপনের সময়কাল থেকে। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গেল অশ্বত্থ আর খ্যাতি পেল বট।






সাধারণ মানুষ বট ও অশ্বত্থ গাছের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা বুঝতে না-ই পারে, অশ্বত্থ গাছকে বট গাছ হিসেবে চিনতেও পারে, অশ্বত্থের প্রশান্তির, ছায়াময় আর বিস্তৃত ক্যানভাসের বিশালতা বুঝতে নাও পারে, রমনা অশ্বত্থমূলকে অশ্বত্থমূল বলা হলে সাধারণ মানুষের মনের গভীরে পৌঁছানোটাও কঠিন হতেই পারে, বটমূল না বলে অশ্বত্থমূল বললে সব কিছু বিশাল আকারে চোখের সামনে ধরা নাও দিতে পারে, তাই বলে কি অশ্বত্থমূল বটমূল হয়ে যাবে? নিজের নাম পরিচয় সব হারিয়ে অশ্বত্থমূলই বটমূলের আড়াল থেকে প্রশান্তির, ছায়াময় আর বিস্তৃত ক্যানভাসের বিশালতা দান করছে আর উপহাস করছে আমাদের






তাই বলে রমনার অশ্বত্থ বটমূল হবে!
পাকুড়, অশ্বত্থ, বট এরা সবাই একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে বেশ কিছু রোগের ঔষধ তৈরির উপাদান হিসেবে অশ্বত্থের পাতা, ফল, ফুল, ছাল ও শেকড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে; যে গাছটা ২৪ ঘণ্টাই অক্সিজেন দেয়। সেই অশ্বত্থ গাছটিকে মানুষের চিনারও তো দরকার আছে। রমনার বটমূল কি কখনও সাধারণ মানুষদের পরিচয় করিয়ে দিবে না রমনার অশ্বত্থ গাছটিকে।

রমনার ‘বটমূলে’ ছায়ানটের আয়োজনে এখন বর্ষবরণ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বিভিন্ন ঋতু উৎসব, রবীন্দ্র-উৎসব, নজরুল-উৎসব, নজরুল-রবীন্দ্র জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী, লোকসঙ্গীতের উৎসব, নাট্যোৎসব দেশ-ঘরের গান, শুদ্ধ-সঙ্গীত উৎসব, নৃত্যোৎসব ইত্যাদি উৎসব উৎযাপন করা হয়। এই উৎসবগুলোর উৎযাপনের স্থান কখনও কি বলা হবে এবারের বর্ষবরণ উৎসব উৎযাপন করা হবে রমনার ‘অশ্বত্থমূলে’? রমনার বটমূল কি কখনও অশ্বত্থমূল হবে?


[তথ্য সংগৃহীত]







No comments:

Post a Comment