


গ্রীন হাউস: বিষাক্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডল, বদলে যাচ্ছে ধরণী
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া (Green House Effect) হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ হইতে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রীন হাউজ গ্যাসগুলোর দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়। এই বিকীর্ণ তাপ ভূপৃষ্ঠে উপস্থিতিতে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ফিরে আসে এবং বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়।
অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণের ফলে পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী উত্তপ্ত হওয়াকে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া বোঝায়। পৃথিবী যে পরিমাণ গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে তার ৯০% মানুষের সৃষ্টি।মানব সভ্যতার অগ্রদ্বীপ অগ্রগতির প্রেক্ষিতে যার অবদানকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয় তা হল হল বিজ্ঞান। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের আধুনিক যুগ। বিজ্ঞানের বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বিস্ময়কর অবদানে মানব জাতি একদিকে যেমন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করছে, অন্যদিকে তার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে এক ভয়াবহ সর্বনাশের দিকে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যাপক বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের পরিণামে বিশ্বের প্রকৃতি ও তার পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে। এই ভারসাম্যহীনতার ফলে পৃথিবী নামক গ্রহটির সামনে এগিয়ে আসছে চরম দুর্দিন। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া। গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা, ওজোন স্তরের ক্ষয়, বরফ গলন, জলবায়ু পরিবর্তন, মরুময়তার অতি প্রভাব, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা ও বনাঞ্চলের পরিমাণ হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর মানুষ ও পশুপাখি আজ মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া কি:
বিশ্বের মানুষ তার চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সুপ্রাচীনকাল থেকে জীবন-যাপন করে আসছে। পরিবেশ বলতে চারপাশের আলো-বাতাস, মাটি-পানি, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, উদ্ভিদ, প্রাণিজগৎ সবকিছুর সম্মিলিত রূপকে বোঝায়। মানুষ আর তার পরিবেশের মধ্যে যতদিন সমন্বয় বিদ্যমান ছিল ততদিন মানুষ ছিল নির্ভাবনায়। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাম্প্রতিককালে এই বৃদ্ধির হার হয়েছে আশঙ্কাজনক। এখানেই শেষ নয়। আগামী দিনগুলোর জন্য এই সমস্যা আরও প্রকট হতে যাচ্ছে। মানুষ বাড়ার ফলে নগরায়ণ, অপরিকল্পিত কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ত্রুটিপূর্ণ বায়ু নিষ্কাশন, কীটনাশকের ব্যবহার, রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, বনভূমি কেটে ফেলা, অবাধে ইটের ভাটা পোড়ানো, কয়লা ও গ্যাস পোড়ানো এধরনের আরও বহু কারণে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। পৃথিবী নামক গ্রহ আজ মানুষসৃষ্ট কারণে বিপন্ন।
এর প্রতিক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলো পৃথিবীতে এসে পড়ছে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ বাড়তে পারে বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাসের পরিমাণ যে বাড়ছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এসব গ্যাস সূর্য থেকে আসা স্বল্প দৈর্ঘ্য বিকিরণের জন্য স্বল্প কিছু লম্বা দৈর্ঘ্য বিকিরণ ধরে রেখে ভূপৃষ্ঠ এবং নিম্ন বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করে তোলে। বায়ুমণ্ডলে পরিবেশ দূষণের ফলে যেসব গ্যাস জমছে তার অবর্তমানে লম্বা দৈর্ঘ্যের বিকিরণ মহাশূন্যে হারিয়ে যেত। বায়ুমণ্ডলের গ্রীন হাউজ গ্যাস হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি। এসব গ্যাসগুলোর মাত্রা পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত এবং প্রকৃতিগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া।
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, একথা আজ অনুন্নত দেশের সাধারণ মানুষের অজানা থাকলেও উন্নত দেশের উন্নত মানুষের অজানা নয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিমূহুত্বেই। ধরণীর তাপমাত্রা গড়ে প্রায় অর্ধেক ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে সারা পৃথিবীর আবাহওয়া অস্বাভাবিকভাবে বদলে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে কতগুলো গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি। বায়ূমন্ডলে এসব গ্যাস সৃষ্টি হয় গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার জন্য। গ্রীন হাউজ গ্যাসগুলোর মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বায়ুমণ্ডলের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। ফলশ্রুতিতে বিষাক্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডল, বদলে যাচ্ছে ধরণী।
ডব্লিউএমও(ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন) তাদের বার্ষিক গ্রিন হাউজ গ্যাস বিষয়ক বুলেটিনে জানিয়েছে, বায়ুমণ্ডলে জমা হওয়া গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। পৃথিবী থেকে যে পরিমাণ গ্যাস নির্গত হয় এর কিছু অংশ গাছ, মাটি ও সমুদ্র গ্রহণ করে বাকিটা জমা হয়ে থাকে বায়ুমণ্ডলে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় কেন্দ্রীভূতকরণ (কনসেন্ট্রেশন্স)। ডব্লিউএমও ১৯৯০ সাল থেকে বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের উপস্থিতির হিসাব রাখছে। ডব্লিউএমও এর হিসাব অনুসারে বায়ুমণ্ডলে এসব গ্যাসের প্রভাব ৪১% বৃদ্ধি পেয়েছে তখনকার তুলনায় বর্তমানে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় গড়ে ৩ PPM বেশি। বায়ুমণ্ডলে এসব গ্যাস জমা হওয়ার মাত্রা বিগত প্রায় ৫০ লাখ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে ২০১৭ সালে, পৌঁছেছে ৪০৫ PPM তে। ১৯৯০ সালের পর পৃথিবীর অনেক দেশেই কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ শতকরা ২০-৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, এর ফলে বিশুদ্ধ বাতাস থেকে বঞ্চিত ১০০৫০ কোটি মানুষ।
এসব গ্যাস যদি বর্তমান হারে বৃদ্ধি পায় তাহলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হবে এবং তাতে ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ ৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বৃদ্ধির এই পরিমাণ মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় ঘটনা বলে বিবেচিত হবে। কারণ এক ডিগ্রি তাপের কয়েক দশমাংশ উত্তাপ বৃদ্ধি বিশ্বের আবহাওয়ায় এক বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, ঝড়ের তীব্রতা বাড়বে, উপকূল মণ্ডল ও নদ-নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে, বাড়বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও। এতে বিশ্বের অনেক ভূমি বন্যা কবলিত হবে এবং লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়বে। পরিণামে শিল্প-কারখানা, জনবসতি, কৃষি উৎপাদন, মৎস্য চাষ ও বনাঞ্চলের উপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিবে।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবার ফলে গ্রীষ্মকালীন রোগ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে মেনিন জাইটিস, হেপাটাইপিটস বি, সংক্রামক সেরিব্রাল রোগ বেড়ে যাবে এবং সূর্যের বিকিরণকৃত আলাট্রাভায়োলেট রশ্মির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে চোখের ছানিপড়া ও চামড়ার ক্যান্সার বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া:
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশ। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যাধিক্য এখানে বহু সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাছাড়া অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের জন্য এখানে সমস্যা আরো বেশি প্রকট। পরিবেশ দূষণ ক্রিয়া এদেশে ভয়াবহ সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং ভূ-পৃষ্ঠের উত্তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মত ব-দ্বীপ অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহভাবে অনুভূত হবে। বাংলাদেশের ভূমিতল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অতি সামান্যই ওপরে অবস্থিত এবং প্রায় প্রতিবছরই বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের মত ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে থাকে। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে।
সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি:
আবহাওয়াজনিত কারণে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটবে। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে একটি সাধারণ ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন। তবে কোন কোন জায়গা ঊর্ধ্বমুখী ওঠে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। তলিয়ে যেতে পারে এমন প্রধান প্রধান জায়গা হল সুরমা উপত্যকা, ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চল, চলন বিল, ঢাকার জলাভূমি ও খুলনার সুন্দরবন অঞ্চল। উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতল বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করলে লক্ষ্য করা যাবে যে, এক মিটার উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে প্রায় হাজার ২৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এই পরিমাণ বাংলাদেশের ১৫% ভাগের মত। এতে আবাদযোগ্য জমি কমে আসবে। এতে ছিন্নমূল শ্রমজীবী মানুষেরা দ্রুত বর্ধনশীল শহরে ভিড় জমাবে। তাদের জীবনে আসবে অন্তহীন দারিদ্র্য। এই অবস্থায় শস্য উৎপাদন ব্যাহত হবে, বনভূমি ধ্বংস হবে এবং ভৌত সম্পদ ও অবকাঠামোর ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠবে।
মূল ভূখণ্ডে প্রতিক্রিয়া:
সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন নদীর উচ্চতাও বৃদ্ধি ঘটবে। নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নদীর উভয় পার্শ্বে বহু সম্পদ এবং শিল্পাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ফলে জলমগ্নতার ব্যাপ্তি ঘটবে। সমুদ্রতলের পরিবর্তনে সুন্দরবন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ ও জ্বালানি কাঠ সরবরাহের উদ্দেশ্যে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে যে বনভূমি সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তাও বানচাল হয়ে যাবে।
লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ:
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল বরাবরই লবণাক্ততায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের ফলে মিঠা পানির এলাকা সংকুচিত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়ায়ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রতল পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রতল পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা দেশের ভিতরে আরও বেশি করে প্রবেশ করবে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লবণাক্ততার জন্য জনবসতি ও কল-কারখানার প্রয়োজনে মিঠা পানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিবে। গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ায় উপকূলীয় বাঁধের ক্ষতি সাধিত হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি অনেক বাঁধ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া যেমন সমস্যা দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক হবে। বন্যা প্রতিরোধের সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো যেতে পারে। আবার নিমজ্জিত ভূমি উদ্ধারের কৌশল অবলম্বন করতে হবে। লবণাক্ততা নিরোধেও ব্যবস্থা করা দরকার হবে।পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ফসল উৎপাদন তথা চাষাবাদের ধরন পাল্টাতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করা এবং এর ক্ষয়-ক্ষতি কমানোর জন্য কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় সচেতন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে।
বিশ্বের সম্মিলিত প্রয়াস:
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া সমস্যাটি শুধু বাংলাদেশের একার নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আজ এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। উন্নয়নশীল দেশসমূহে এ সমস্যা প্রকট। একে মোকাবিলা করার জন্য উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা প্রয়োজন। আশু কর্তব্য হবে পরিবেশের দূষণ রোধ করা, গ্যাস নিঃসরণ রোধ করা, বর্জ্য সমস্যা সমাধানের কৌশল বের করা, জ্বালানির ভিন্ন উৎস সন্ধান করা, বনাঞ্চল সৃষ্টি করা। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া মোকাবিলা করতে হবে। সারা বিশ্বের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা করলে পৃথিবী আগামী দিনে মনুষ্যবাসের উপযোগী থাকবে।
ধনী দেশগুলোর অবহেলা:
পৃথিবীতে মানুষ চামড়ার (কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ-বাদামী) রঙের পার্থক্য থাকলেও সব রঙের সমস্ত মানুষ বাস করে একই বায়ুমণ্ডলে, উদ্ভিদের ত্যাগ করা অক্সিজেন গ্রহণ করে সব মানুষ বেঁচে থাকে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তার কুফল বিশ্বের গরিব-ধনী, বড়-ছোট কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ-বাদামী রঙের সব মানুষের সাথে উদ্ভিদ ও পশু-পাখিদেরও ভোগ করতে হবে। ভাবতে অবাক লাগে যে পৃথিবীর পরিবেশ বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছালে ধনী দেশগুলোও আক্রান্ত হবে। তবুও ধনী দেশগুলো ঘুমের ভান করে ঘুমিয়ে আছে আর গরিব দেশ গুলোকে বলছে তোমরা সজাগ থেকে পাহাড়া দাও, কেন তারা তাদের কর্তব্যগুলো দুর্বল দেশগুলোর প্রতি চাপিয়ে নিজেদেরও বিপদের মধ্যে ফেলছে! এখানে কারোর হাত নেই এটা কোন ছোট-খাট ব্যাপার নয় কিংবা গায়ে-গতরে খাটার ব্যাপার না শুধু পরিকল্পিতভাবে বিশ্বের সব দেশ ভাগাভাগি করে গাছ রোপণ করলে এই গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রোধ করা অনেকটাই সম্ভব। অহংকার সবসময় সব জায়গায় থাকে না, হয়তো এই অবহেলার ফল একসময় ধনী দেশগুলোরই বেশি ভোগ করতে হবে তখন ভান করা ঘুমানোর ফলে নিজেদের বাঁচানোর পথ খুঁজে পাবে না।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা:
সাড়া পৃথিবীতে প্রায় ১০০ একর বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে প্রতি মিনিটে। ব্যাপকভাবে বনভূমি ধ্বংস করার ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবার আরেকটি কারণ। অথচ এই উদ্ভিদ প্রাণী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পৃথিবীর মোট বনের পরিমাণ ৪,৩০,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। অথচ উদ্ভিদ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের পরিপূরক কেননা উদ্ভিদ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণী কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে আবার প্রাণী অক্সিজেন গ্রহণ করে উদ্ভিদ অক্সিজেন ত্যাগ করে তার মানে উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের বেঁচে থাকার অবলম্বন। প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রাকৃতিক গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া রোধে সহায়তা করে। ফলে পরিবেশও ভাল থাকে। আমি জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে ইমরান খানের ভাষণের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি-
“প্রথমেই আমি শুরু করতে চাই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে। অনেক নেতা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু আমি মনে করি তারা প্রকৃতপক্ষে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করছেন না। অনেক বিশ্বনেতা যারা এই বিষয়ে কিছু করতে চান তারাও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না।
আমাদের অনেক আইডিয়া আছে। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, অর্থায়ন ছাড়া আইডিয়া শুধুমাত্র অবাস্তব কল্পনা।
পাকিস্তান, আমি আমার নিজ দেশের সম্পর্কে আপনাদের বলছি। পাকিস্তান হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত বিশ্বের প্রথম দশটি দেশের একটি। আমরা আমাদের নদীগুলোর উপর নির্ভর করি। পাকিস্তান মূলত একটি কৃষি-প্রধান দেশ। আমাদের ৮০ ভাগ পানি আসে হিমবাহ (তুষারস্রোত) হতে, এসব হিমবাহ শুধুমাত্র পাকিস্তানের অংশ হতে নয় এমনকি ভারত হতেও, কারাকোরাম হিমবাহ, হিমালয় ও হিন্দুকুশ হিমবাহ হতে এবং এগুলো প্রবাহিত হয় বিপদজনক গতিতে। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের পর্বতগুলোতে ৫০০০ হিমবাহ চিহ্নিত করেছি। আমরা সেখানে আশঙ্কা করছি বড় আকারের আকস্মিক বিপর্যয়ের।
কেপি, পাকিস্তানের একটি রাজ্য যেখানে আমরা ৫ বছরে কয়েক বিলিয়ন গাছ লাগিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ১০ বিলিয়ন গাছ রোপণ করা। কিন্তু একটি রাষ্ট্র একা কিছু করতে পারে না। এখানে প্রয়োজন বিশ্বের সমন্বিত উদ্যোগ। তবে আমি আশাবাদী যে, সর্বশক্তিমান আমাদের বড় একটি শক্তি দান করেছেন- সেটা হচ্ছে মানবসম্পদ। আমরা বড় ও মহৎ কিছু করতে পারি এবং এখানে আমি আশাবাদী বৃহৎ ও ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘই নেতৃত্ব দিবে। ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই চাপ দিতে হবে। গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য ধনী দেশগুলোরই মূলত দায় বেশি। সুতরাং আমি অনুধাবন করি এই বিষয়ে জাতিসংঘই নেতৃত্ব দিবে।”
পৃথিবীকে নির্মল রাখার জন্য ইমরান খানের প্রতিবাদী বক্তব্যের সাথে আরো অনেক অনেক প্রতিবাদী বক্তব্য যুক্ত করুন, ধরাকে বাসযোগ্য রাখুন।
No comments:
Post a Comment