Pages

বাঙালী নারীর ঐতিহ্য অনুকরণের ভিড়ে আজ বিলুপ্ত

বাঙালী নারীর ঐতিহ্য অনুকরণের ভিড়ে আজ বিলুপ্ত

বাঙালী নারীর ঐতিহ্য অনুকরণের ভিড়ে আজ বিলুপ্ত
সভ্যতা, শিষ্টাচার, শালীনতা এবং অধিকার বা সমাধিকার এধরনের যত শব্দ আছে সবই আমরা ভোগ করতে চাই। কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখিনা এর মূলে কী নিহিত রয়েছে। জানতেও চাই না, কারণ আমাদের এত সময় কোথায় গবেষণা করার। রিমোট টিপছি দু'চোখ ভরে দেখছি আর তা দিয়ে নিজেদের গড়ছি। হোক ভালো কি মন্দ। ভালো আর মন্দ তো এখন বিবেকের প্রতিচ্ছবি। এ দু'টোর সমন্বয়ে পেয়েছি নির্লজ্জতা। এই নিলজ্জতা দিয়ে কি সভ্যতা আনা যায়? সভ্যতার নাম করে আমরা যে উগ্রতার পেছনে দৌঁড়াচ্ছি সেটা কোন আধুনিকতা নয়। আধুনিকতার নামে আজ একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের দেশের নারী সমাজের অবস্থান কোথায় যাচ্ছে বাঙালী নারীরা কখনো ভাবছি কি? শুধু যাচ্ছি তা বলবো না আমরা আজ পাহাড়ের উঁচু চূড়ার মত জায়গায়ও উঠে গেছি, সকল ক্ষেত্রে সকল কর্মে। কিন্তু, কিন্তু হল আমরা নিজেরা পণ্য হয়ে প্রকাশ পাচ্ছি এই পুরুষ শাসিত সমাজে।
যেখানে পুরুষরা নারীদের টেনে হিছরে ছিড়ে খায়, সেখানে আমরা নারীরা আহার হয়ে তাদের লোভ দেখাই। এতে হয়তো অনেকে রাগ করবেন, আবার কেউ কেউ ক্ষেপে গিয়ে ভীর ভীর করে কিছু নোংরা বুলিও ছাড়বেন। আবার কেউ বিবেচনা করবেন একথা কেন বলছি? কারণটা বলছি। বর্তমানে পোশাকের যে আধুনিকতার বিস্তার করছে তা কেবল মাত্র কিছু সংখ্যক নারীর নিলজ্জতার জন্য। পরিপূর্ণ কিংবা পুরনাঙ্গ বয়সের মেয়ে থেকে শুরু করে মা-চাচী, দাদী-নানীরা এখন যে পোশাক পরেন বা যেভাবে পরেন তাতে পুরুষ শুধু না নারীরাও চোখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। আবার তাকাতেও লজ্জাবোধ করেন। এমন পাতলা কাপড়ের পোশাক পরেন, পোশাক না পরার মতোই দেখায়। পোশাক পরা হয় শরীর আবৃত করার জন্য, ঢেকে রাখার জন্য; অথচ আমরা লোক সমাজে অঙ্গ প্রদর্শন করছি বিভিন্ন কৌশলে। পাতলা শাড়ী পরছি সম্পূর্ণ আঁচল ছেড়ে, নাভির নিচে। পাতলা কাপড়ের সেলোয়ার কামিজ পরছি সেমিজ পরছি না আর ওড়না তাতো গলায় কিংবা কাধের জন্য। পাতলা কাপড়ের পোশাক যদি আমরা এভাবে পরি তাতে একটা নারীকে কতটা মার্জিত দেখায়? পুরুষের কাছে লোভনীয় হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি? আমি কাপড়ের দোষ দিচ্ছি না। পাতলা শাড়িও রুচিসম্মতভাবে অনেকেই পরেন তাতে কি পরোয়াকে কুৎসিত দেখায়? নাকি তাকে মানুষ বাঁকা চোখে দেখে? না, বরং তাদের সম্মান করে শ্রদ্ধা করে। পাতলা কাপড়ও মার্জিত হয়ে উঠে যদি সেটা শালীনতার মাধ্যমে করা হয়। পাতলা শাড়ি আমরা আঁচল ভাস বা ভেঙ্গে কুচি দিয়ে পরতে পারি, ওড়না গলায় না ঝুলিয়ে ওড়নার পরার জায়গায় পরতে পারি, পরতে পারি সেমিজ। এতটুকুর জন্য শুধু প্রয়োজন রুচিবোধের। হীনরুচির কারণে আজ আমাদের এত অবক্ষয়।
বাঙালী নারীর ঐতিহ্য অনুকরণের ভিড়ে আজ বিলুপ্তঅনুকরণ করা আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা
আমরা মর্ডান হতে হতে আমাদের ঐতিহ্যগত পোশাক ছেড়ে কেড়ে আনছি ভিন দেশে আধুনিকতা। আমরা এখন শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি পরে নকল সাজে সাজছি। তাতে কি খুব বেশি সুন্দর দেখায়? আসলে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি নকলে, অনুকরণে। অনুকরণ করা আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা অনুকরণ করি কিন্তু বিচার করি না ভালো মন্দ। নির্বিচারে চলতে চলতে আজ আমরা প্রাচীন যুগকেও হার মানিয়েছি। প্রাচীনকালে কাপড় ছিল না বলে লজ্জা ঢাকত গাছের ছাল বা পাতা দিয়ে। আর এযুগে অঙ্গ প্রদর্শন করতে যেন বেশি আগ্রহী। অসীম আবিষ্কার আমাদের আধুনিকতা দিয়েছে বিনিময়ে নিয়েছে লজ্জা। লজ্জা মানুষকে সংযত রাখে। সংযত মানুষ নিজের অজান্তে সুন্দর হয়ে উঠে, প্রকাশ পায় রুচি, শালীনতা এবং ব্যক্তিত্ব। সমাজে সে শ্রদ্ধার ও সম্মানের ব্যক্তি। সে শিক্ষা পাওয়া যায় পরিবারে, মায়ের কাছে। মা আর দাদী-নানীদের যদি এই অবস্থা হয় মেয়ে বা নাতনীদের তো অনুসরণের পালা। শিক্ষালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি উশৃংখল, লজ্জাহীন, শালীনতাহীন এবং ব্যক্তিত্বহীন হয়ে থাকেন তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের কি শিক্ষা দিবেন? নিশ্চয়ই নিজের ব্যতিক্রম কিছু নয়। এতে তো ছাত্র-ছাত্রীদের কোন দোষ নেই। ভাস্কর্য যেভাবে মূর্তি গড়ে, মূর্তি তেমনি হতেই বাধ্য। এখানে বাবাদের অবস্থান অনেকটা গৌণ, কারণ তারা মাকে যেভাবে দেখেছে স্ত্রীকে বলতে পারছে না আর মেয়েকে, সে তো প্রশ্নই উঠে না। অবশ্য এক্ষেত্রে রুচি বলেও কথা! আমি শুধু পোশাকের কথা বলবো না, বলবো একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আদর্শ নারীর অক্ষয়ের সমস্ত কারণগুলোর কথা। হতে পারে পোশাক, হতে পারে তার চালচলন, হতে পারে ব্যবহার, হতে পারে কুশিক্ষা, হতে পারে ....... ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা বিদেশীদের অনুসরণ করি, কিন্তু আমাদের কি কেউ অনুকরণ করে? তারা তো তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে অটল। তবে আমরা কেন আসল ফেলে নকল ভঙ্গিতে নাচি। আমাদের দেশীয় পোশাক আশাক কি এতই রুচিহীন অমার্জিত। তবে কেন বলা হয় শাড়িতে নারী অপরূপা অনন্যা। সালোয়ার-কামিজের কথায় আসি শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি হাতকাটা বিভিন্ন শট পোশাক থেকে কি কম সুন্দর? তবে কেন আমাদের, আমাদের পোশাকের প্রতি এত অনীহা এত বিমুখতা? কেন আমরা অঙ্গ প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি? হায়! হায় আধুনিকতা!
এমনিতেই নাচুনি কাঠি তার ওপর ঢোলের বারি
আমাদের দেশের শহর থেকে গ্রামের আনাচে-কানাচে বিনোদনের একমাত্র জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে টিভি। টিভি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে নাটক হচ্ছে জনগণের বিনোদনের প্রদান অনুষ্ঠান। বর্তমানে নাটকেরও একই অবস্থা। চলচ্চিত্রে ব্যবসা লোকসানের ভয়, টিভি'রও কি তাই? কেন টিভি দেশের সংস্কৃতি, দেশীয় ঐতিহ্য ফেলে পশ্চিমা ঢঙের পোশাক দিয়ে নাটক করাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই নাচুনি কাঠি তার ওপর যদি সব দিক থেকে ঢোলের বারি পরে তাহলে তো মানুষ সেই তালেই নাচবে। অন্তত বিটিভির এদিকটা নজরে দেয়া উচিত, কারণ পরিবারের সকল সদস্য একত্রে বসে নাটক দেখা হয়। বিটিভি কর্তৃপক্ষরা কি ভেবেছেন দেশের সব পরিবার সমস্ত মানুষের রুচি বিকৃত হয়ে গেছে, নীলজ্জতার প্রলেপে ঢেকে গেছে দেশের সব পরিবার। যদি এই ধারণার বশবর্তী হয়ে জনগণকে বিনোদন দেওয়া হয় তাহলে সম্পূর্ণ ভুল। এখনো এমন এমন পরিবার আছে যারা একটু সুস্থ্ বিনোদন খুঁজে বেড়ায়। এই ভুল ধারণা নিয়ে নারী সমাজকে আর কত নিচে নামাবেন? নিয়ে যাবেন আর কতদূর? পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যেমন বেশি আমাদের দেশ তার ব্যতিক্রম নয়। এখনো অমানুষের সংখ্যা জগতের সর্বত্রই কম। আমার অনুরোধ আদর্শ সভ্য পরিবারের কথা ভেবে মার্জিত পোশাকের নাটক প্রচার করা হোক উশৃংখলতাকে নির্মূল করে ফিরিয়ে আনা হোক শৃংখলতা, মার্জিত এবং শালীনতায়। এই ব্যাপারে বিটিভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এবং অবশ্যই পারে!
সুস্থ ও সুখী নারী সমাজ গড়ার প্রয়াসী হোন
দাদী-নানী আর মা-চাচীদের বলছি আমরা সৌন্দর্য প্রিয় মানুষ। যেভাবে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, সুন্দর দেখায় আপনারা তা করুন। নিজের পরীক্ষা নিজেই করুন। পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করুন কোন পোশাক কিভাবে পরলে আপনাকে সুন্দর ও মার্জিত লাগে, প্রকাশ পায় রুচিবোধের। অশালীনতার কারণে আজকের নারীরা পথে চলতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে, পথে-ঘাটে বখাটে ছেলে ছোখরাই শুধু নয় ভদ্রবেসি পুরুষগুলোও নোংরা কথা বলতে পিছ পা হয়না। গায়ে ডেস কিংবা কুনি মারতেও দ্বিধা করে না। তারা হাত চালায় এদিক ওদিক। তারা এসিড মারা, ধর্ষণ করার এবং হত্যা করার মত জঘন্য কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। তাদের পরিবর্তন হবে না পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম আছে কিন্তু, মানুষ এর বাইরে নয়। এ অবস্থায় যদি নারী শরীর প্রদর্শন করে অসভ্যের মত চলাফেরা করে তাহলে তারা তো আরো বেপরোয়া হয়ে যাবে দিনকে দিন। এর প্রভাব তো শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, প্রভাব পরছে শান্ত-ভদ্র-মার্জিত মেয়েদের উপর। আপনাদের দেখেই আপনাদের মেয়ে-নাতনিরা শিখবে, শিখবে উত্তরসূরি। নারী জাতির এই জঘন্য এবং নোংরা আধুনিকতাকে ধুমড়ে-মুচড়ে উবরে ফেলে সুন্দর, সুস্থ ও সুখী নারী সমাজ গড়ার প্রয়াসী হোন দাদী-নানী এবং মা-চাচীরা।
সত্যি বলতে কি বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটাই সুন্দর, কিন্তু আমরা মানতে চাই না। আমাদের বয়স বাড়বেই কেননা মানুষ মাত্রই বয়স বাড়ে। আমরা রং মেখে ঢঙ দেখিয়ে সারা জীবন যুবতী থাকতে চাইলেও পারব না। তবে কেন মিথ্যে এই বাহানা? এখনো সময় আছে ফিরে আসুন শালীনতায়, তানাহলে গড়াতে গড়াতে কোথায় পড়বে নারীরা তা জানে না। যদি কোন দিন বুঝতে পারে তখন হয়ত আর কিছুই করার থাকবে না।















No comments:

Post a Comment