Pages

ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়

ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়



ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়
বিজ্ঞান মানুষের বৈষয়িক জীবনে বিস্ময়কর অবদান রেখেছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানের উন্নতির প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রা, চিন্তা-ভাবনা ও মূল্যবোধে এসেছে প্রবল পিটন। ফলশ্রুতিতে সংস্কার বিশ্বাস ও প্রবণতার বদল হচ্ছে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সবকিছু যাচাই করার আগ্রহও মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরিবেশের ফলে মানুষের জিজ্ঞাসার পিপাসার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনদিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব প্রগাঢ় হওয়ায় এ ধরনের মানসিক বিকাশ ঘটছে। শিক্ষার দিক দিয়ে অনগ্রসর হলেও আমাদের জাতীয় জীবনে বিজ্ঞানমনস্কতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় জীবনের অনগ্রসরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সংস্কার মুক্তির যে প্রয়োজন তা বিজ্ঞানই দান করতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রভাবে জীবন হয়ে উঠছে কর্মমূখর। যেমন, বিজ্ঞানের অবদান ইউটিউব আর ইউটিউব কর্মহীন জীবনকে কর্মমূখর করে তুলে বেকার সমস্যার অনেকাংশ।

বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ইউটিউবের ভিডিও সাইটটি। ভিডিও শেয়ারিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ইউটিউব। ইউটিউবের নাম শুনেনি এমন মানুষ পাওয়া দুরূহ। ইউটিউব দখল করে নিয়েছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মন। এখানে কি নেই? যে যা চায়, যে রকম চায় সব পাওয়া যায়। উলঙ্গ দেহ খুব সহজেই প্রদর্শন করা যায়, সহজেই সেলিব্রেটি হওয়া যায় আবার আয়ও করা যায় সহজেই। এসব কারণে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব।

সামাজিক স্থিতিশীলতা বা সংহতির কতকগুলো বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন- শিক্ষকের দায়িত্ব হল ছাত্রদের পড়ানো, প্রশ্ন তৈরি করা, পরীক্ষা পরিচালনা ইত্যাদি। সমাজ আশা করে, শিক্ষকরা তাঁদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করবেন। যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হয় তবে সামাজিক সংহতি অক্ষুণ্ণ থাকে নতুবা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হবে। তেমনিভাবে, সমাজ আশা করে প্রকৌশলী পানির মধ্যে খুব বেশি পরিমাণ ফ্লোরাইড রাখবে না; রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিজ দেশের কোন মূল্যবান তথ্য শত্রুর কাছে সরবরাহ করবে না; পাহারাদার ঠিকমত পাহারা দেবে, ছাত্ররা ঠিকমত পড়াশুনা করে নিদিষ্ট নিয়মে পরীক্ষা শেষ করবে। এককথায়, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য নিদিষ্ট কাজ আছে। সমাজ আশা করে প্রতিটি ব্যক্তি তার কাজ ঠিকমত সম্পাদন করুক। সমাজে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ তাদের কাজ মোটামুটিভাবে পালন করে বলেই সমাজ টিকে আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। ফলে সমাজে বসবাস করা কঠিন হয়ে যায়।

মানুষ উন্নতির জন্য যত পরিশ্রমী করুক না কেন সংঙ্গবদ্ধ এবং শৃংখলাবোধ ছাড়া সার্বিক কল্যাণ আনতে পারে না। দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যবোধ সজাগ করতে হলে সবাইকে কতিপয় সাধারণ নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়; ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়। তাই ব্যক্তির অসংযত আচরণ এবং লোভের কু-প্রবৃত্তিকে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত ব্যক্তির তা বজায় রাখা সম্ভব নয়।

ইউটিউব মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে ভিডিও সাইট ইউটিউবের অবস্থান। ইউটিউবের মাধ্যমে মানুষ যেমন শিক্ষা লাভ করে তেমনি শিক্ষার অপব্যবহারও করে। এখন মানুষের কোন বিষয় জানার জন্য বা শিখার জন্য কাঠখড় পোড়াতে হয় না। যার যখন যা প্রয়োজন গুগল কিংবা ইউটিউবে সার্চ দিয়ে বের করে নেয়। গুগলের থেকে ইউটিউব একটা দিকে এগিয়ে আছে। ইউটিউব এখন ছোট-বড় সব মানুষের হাতের মুঠোয়। যাই হোক ইউটিউব এবং গুগলের মধ্যে পার্থক্য করা আমার বিষয় না। আমার বিষয় ইউটিউবের ভিডিও, বিশেষ করে আউটসোর্সিং এর অন্তর্ভুক্ত যত ভিডিও আছে সেই ভিডিওগুলো উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলা। এই লেখায় আউটসোর্সিং কাজ এবং আয় বিষয় ভিত্তিক ভিডিওর অপকারিতা ও উপকারিতা সমর্পকে যা যা তুলে ধরা হবে তা নিম্নরূপ।


A. অপকারিতা


ভাষাগত সমস্যা

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য দেশের ভাষা শিখার প্রতি আমাদের ছাত্রসমাজে আগ্রহ দেখ যায় না, অনাগ্রহটা সর্ব কালের সর্ব যুগের। তাই ইংরেজী ভাষা আমাদের দেশের খুব কমসংখ্যক মানুষ জানে, বাকিরা ইংরেজীর ই-ও জানেনা। এখানেই সমস্যা প্রকট, ইউটিউবে ভিডিও দেখে আউটসোর্সিং মানে ঘরে বসে বিশ্বের যে কোনো দেশে কাজ করে আয় করা যত সহজ মনে হয় বাস্তবে ঠিক তার ওল্টো। বিশেষ করে ইংরেজী না-জানারা যখন ইউটিউবে ভিডিও দেখে খুব সহজেই আয় করা যায় বলে আগ্রহ নিয়ে কাজ শুরু করে বা করতে গিয়ে নিজের যোগ্যতার সাথে কাজের সামঞ্জস্য বজার রাখতে না পেরে নিরাশ হয়ে ফিরে আসে।

যেহেতু বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হয় তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে ইংরেজী ভাষার উপর কিছুটা দক্ষতা থাকা দরকার। ইংরেজীতে দুর্বল থাকার কারণে বায়ারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে না বা কোন সমস্যা হলে বায়ারকে বুঝাতেও পারে না। এই ভয়ে অনেকে বেকার থাকা সত্ত্বেও আউটসোর্সিংয়ে আগ্রহী হয় না।

ভিডিও দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত করা

আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয় করা নিয়ে আমাদের দেশে এত বেশি আকৃষ্টমূলক ভিডিও তৈরি হচ্ছে ইউটিউবে। এইসব বিজ্ঞাপন ভিডিও দ্বারা মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনলাইনে আয় করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার বাহারি ভিডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়। লোভের মোহে এইসব বাহারি ভিডিও বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানসিক ও আর্থিকভাবে। পৃথিবীর সব মানুষ আয় করতে চায়, এটাই মানুষের সংসার জীবনের বাস্তব ধর্ম। যে দেশে কাজের খুব অভাব সে দেশে যদি কোন একটা মাধ্যম কাজের সুবর্ণসুযোগ এনে দেয় সেই সুযোগ কর্মহীন মানুষ লুফে নিবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন ইউটিউবে ভিডিও দেখে অনেকে কাজ শুরু করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় না বুঝার কারণে। বাস্তবতার সাথে ভিডিওর মিল থাকে না অধিকাংশ ভিডিওতে, তখন অনেকের পক্ষে না বুঝার বাধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না বলে আয় করা পর্যন্ত যেতে পারে না, থেমে যেতে হয় শুরুতেই। উদাহরণস্বরূপ ইউটিউবের কিছু ভিডিওর হেডলাইন নিচে তুলে ধরছি –

গরিব থেকে ধনী হাওয়ার সহজ উপায় || 4 Ways To Save Money and Invest || idea 2019
Copy Paste Typing (ফ্রিল্যান্সিং) করে মাসে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় । *Exclusive* 2019

ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়
Bitcoin কি? কিভাবে বিটকয়েন দিয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি টাকা আয় করবেন ( কোটি কোটি)

ভিডিও সত্যি আড়াল করা

ইন্টারনেট থেকে বিনা পরিশ্রমে খুব সহজে আয় করা যায় এমন চমৎকার ভিডিও তবু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভিডিও দেখে। কারণ অধিকাংশ ভিডিওতে বাস্তবতা পুরোপুরি তুলে ধরা হয় না; আড়াল করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য। উদাহরণস্বরূপ ইউটিউবের কিছু ভিডিওর হেডলাইন নিচে তুলে ধরছি –

Outsourcing এর যে পদ্ধতিতে আপনি অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা আয় করতে পারবেন তা জেনে নিন।
কোনো কাজ না করেই একটা একাউন্ট খুলেই দিনে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করুন |
প্রতি সেকেন্ডে ইনকাম- জয়েন করলেই ১০ ডলার (৮০০টাকা) বোনাস - বিকাশ পেমেন্ট সুবিধা
প্রতিদিন ৩০ মিনিট কাজ করেই মাসে ৫০ হাজার টাকা ।
How I Made $3300 In 5 Month|! - Ways to Make Money Online Fast
বাংলাদেশিরা যেভাবে Upwork থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করছে

ইউটিউবের ভিডিওগুলোতে এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন ভিডিও দিয়ে বেকার সমাজের দুর্বলতা নিয়ে কর্মহীনদের বিভ্রান্ত করা হয়। পরিশ্রম ছাড়া আয় তা কি কখনো হয়। ইন্টারনেটের যে কোন মাধ্যমে কাজ করেন না কেন অবশ্যই যথেষ্ট সময়, শ্রম এবং মেধা খরচ করতে হবে। আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে পরিশ্রমের ওপর, যে যতটা পরিশ্রম করতে পারবে সে ততটাই আয় করতে পারবে।

ভিডিও তৈরির মানসিকতা

শুধুমাত্র নিজের আর্থিক লাভের জন্য আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয়ের ভিডিও ধারণকারীরা ইউটিউবে বিজ্ঞাপন ভিডিও পাবলিস্ট করে থাকে। ভিডিওতে এমন এমন হেডিং দেয়া হয় যাতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা খুব সহজ হয়। অধিকাংশ ভিডিও বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয় পৃথিবীতে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে “পরিশ্রম ছাড়া” কোটি কোটি টাকা আয় করার একমাত্র সহজ পথ। মাজার ব্যাপার হলো যখন যেই ভিডিও দেখবেন ঐ একই কথা বলছে। অনেকটা ন্যাপার মত, মাথা ব্যথা পা ব্যথা গা ব্যথা কিংবা জ্বর যাই হোক না কেন ন্যাপা খাও। এই মানসিকতা নিয়ে ভিডিও তৈরি করার ফলে যে বা যারা ভিডিও দেখছে শুধু তারাই বিভ্রান্তির শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা কিন্তু না, এই মানসিকতায় দেশে জন্য বয়ে আনছে ক্ষতিকারক অকল্যাণ। কেননা আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয় বিষয়ভিত্তিক ভিডিওগুলো দেখে থাকে সাধারণত দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অল্প শিক্ষিত ও শিক্ষিত বেকারগ্রস্ত যুবসমাজ। তারা কিছু জানতে, শিখতে এবং বাস্তবে কর্মসংস্থান করতে এসব ভিডিও দেখে থাকে; বিনিময়ে তারা বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত ভিডিও দেখে। বর্তমানে কর্মসংস্থানের সুবর্ণ সুযোগ থাকা সত্বেও বেকার গ্রস্তরা নিরাশ হয়ে ফিরে আসছে এতেকরে দেশের বেকার সমস্যা বাড়ছে বই কমছে না। ভিডিও দেখার ফলে কেবলমাত্র লাভবান হচ্ছে এবং হবে ভিডিও ধারণকারী। এই কুৎসিত মানসিকতা দূর করে জাতির বেকার সমস্যার কথা ভাবা উচিত। বিশেষ করে কর্মসংস্থানের শিক্ষামূলক এই ভিডিও গুলো এমনভাবে তৈরি করা উচিত যাতে ভিডিও দেখে শিখে বাস্তবের কাজে লাগাতে পারে, এতে কর দেশের বেকার সমস্যা একাংশে লাঘব হবে। সাহায্যার্থীকে এমনভাবে সাহায্য করতে হয়, যাতে সেও এক পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে সামাজিক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়।

বেকার সমস্যাকে কাজে লাগানোর মানসিকতা

বেকারত্ব কর্মক্ষম ও মানবতার অবমাননা, সমাজজীবনের অভিশাপ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশের অন্যতম মৌলিক আর্ত-সামাজিক সমস্যা হিসেবে বেকারত্বের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক এবং বেকারত্বের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো শিক্ষিত বেকারের হার বৃদ্ধি। এই ব্যাপকতার সুযোগ কাজে লাগানোর মানসিকতা নিয়ে আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয়ের ভিডিও বিজ্ঞাপন তৈরি করা। যাতে দিশাহারা বেকারগ্রস্তরা এসব বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে একবার হলেও ভিডিও দেখে, কারণ যারা দেখবে তাদের তেমন একটা লাভ না হলেও যার বা যাদের ধারণ করা ভিডিও দেখছে সে তো আর্থিক লাভ হচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত বেকারদের পুঁজি করে নিজের আয়ের জন্য যারা এসব ভিডিও তৈরি করছে তারা জাতিকে কুৎসিত মানসিকতা ও হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ইউটিউবের কিছু ভিডিওর হেডলাইন নিচে তুলে ধরছি –

কিভাবে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করবেন খুব সহজে ভিডিওটা দেখে রাখুন।
৫ মিনিটেই ৪০০ ডলার ইনকামের চেষ্টা | মিস করবেন না |
ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়



ফ্রিতে আপনার ওয়েবসাইট খুলে প্রতিমাসে ১০০$ আয় করুন।
$10 free earning 100%|| টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়|

বেকার সমস্যা বেড়ে যাওয়া

আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয়ের বিজ্ঞাপন ভিডিওগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে দেখবে তারই মনে হবে সব ছেড়ে শুধু এই কাজই করি। এত সহজে মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করার পথ পৃথিবীর আর কোথাও নেই, আছে একমাত্র ইন্টারনেট জগতে। এমন ভাবে ভিডিও হেডলাইনে দেখানো হয় যেন কাজ না করলেও শুধু একাউন্ট খুললেই ঘরে বসে টাকা পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মানুষ এমনিতেই খুব সৌখিন কঠোর পরিশ্রম করার আগ্রহ তেমন একটা নেই। তাই ভিডিও নামক বিজ্ঞাপন দেখে ঘরে শুয়ে-বসে কোটিপতি বনে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে লোভে পা ফেলে অনেকেই বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। ফলশ্রুতিতে অনলাইনে আয়ের প্রতি অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, এসব ভিডিওর কারণে দেশে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ইউটিউবের কিছু ভিডিওর হেডলাইন নিচে তুলে ধরছি –

ঘরে বসে আউটসোর্সিং করে প্রতিমাসে ১০০ ডলার থেকে ৫০০ আয় করুন
YouTube এ অনেক টাকা আছে || ৭ টা উপায়ে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন!
সিপিএ মার্কেটিং : ক্লিক করেই মাসিক ইনকাম ১ লাখ টাকার বেশি । প্রতিদিন পেমেন্ট নিন পেওনিয়ার ও পেপালে
আপনি কি ফ্রীলাঞ্চিং করার জন্য ভাল কোন গাইডলাইন পাচ্ছেন না? এখনি DVD অর্ডার করুন।
Bangladeshi App per day 1000 taka income, payment bkash
আউটসোর্সিং শিখতে চান? শুরু করুন DVD কিনে |
VIDDO.COM থেকে আয় করবেন যেভাবে | Earn Money from VIDDO |
আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয় করুন মাসে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
খুব সহজে এই ব্যাবসায় কোটিপতি হওয়া যায় || ২০১৯ সালের সেরা ব্যাবসা আইডিয়া|| Easy business idea in 2019
ফ্রিতেই যে কেউ খুব সহজে বিজনেস কিংবা যেকোনো দরকারে লাখ/কোটি টাকার অনুদান নিন - পেমেন্টঃ ব্যাংক
অনলাইন আউটসোর্সিং শিখুন।ঘরে বসে টাকা আয় করুন ২০১৯।Freelancing Outsourcing course 2019

বিজ্ঞাপন নামক ভিডিও সংখ্যা বর্তমানে এত বেশি যে মানসম্মত ভিডিও খুঁজে পাওয়া দুরূহ। এসব চটকদারি ভিডিওর কারণে সত্যিকারের উপকৃত শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো ঢাকা পড়ে আছে। চটকদারি বিজ্ঞাপন নামক ভিডিও তৈরি করার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে গেছে কেননা ইউটিউবে ভিডিও দিলে কেউ দেখলে বা ভিউ হলেই আর্থিক লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। এই মানসিকতা নিয়ে লোক ঠকানো বিভ্রান্তিকর ভিডিও দিয়ে থাকে কিছু হীনমন্য মানুষ।

ফ্রিতে ওয়েবসাইট/একাউন্ট খুলে আয় করা যায়

চটকধারি ভিডিওর প্রলোভনে অনেকে বেকার অবস্থা দূর করতে লোভে পরে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। ফ্রিতে ওয়েবসাইট খুলে ডলার আয় করা যায়, একাউন্ট খুলেই দিনে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করা যায়, সত্যিই কি তাই! এত সহজে আয় করা যায় তাও আবার ডলার আর ডলার আয়। এধরনের ভিডিও দেখে অনেকে একাউন্টও খোলে শুরু করে, ডলার আর পকেটে আসছে না, আশায় আশায় নিরাশ হয়ে থমকে যেতে হয়। ফ্রিতে ওয়েবসাইট/একাউন্ট খুললেই পকেটে ডলার আসতে থাকে, ইউটিউবে এধরনের প্রলোভন দেখানো ভিডিও বিজ্ঞাপন অভাব নাই। বিশেষ করে আমাদের দেশের বাংলা ভিডিও, এত বেশি প্রলোভন দেখানো হয়। বেকার গ্রস্তরা এই প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফ্রিতে ওয়েবসাইট/একাউন্ট খুলে কিংবা ফ্রি ডোমেইন-হোস্টিং নিয়ে কি কি মূল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আর কিনতে হলে তো আর কথাই নেই কারণ বিল পরিশোধ করার মহা-ঝামেলায় পড়ে বিরক্ত হতে হয়। সাধারণ মানুষের বহির্বিশ্ব বিল পরিশোধ করার সহজ কোন ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। শুরু করার পর এসব ঝামেলার কারণে বেশিরভাগ ধর্য্য হারিয়ে শুরুতেই ঝরে পরে এরমধ্যে ধর্য্যবানরা টিকে যায় তারা ডলার আয় করে। উদাহরণস্বরূপ ইউটিউবের কিছু ভিডিওর হেডলাইন নিচে তুলে ধরছি –

ফ্রিতে আপনার ওয়েবসাইট খুলে প্রতিমাসে ১০০$ আয় করুন।make a free website bangla
রেস্টুরেন্ট ওয়েবসাইট তৈরি করুন ফ্রি| how to restaurant website in wordpress
How to create a free website in 10 min?
ফ্রি ওয়েবসাইট খুলে প্রতিমাসে ৫০-১০০ ডলার আয় করুন ৷৷ Earn by free website
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করেই লাখ লাখ ডলার আয় - ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট করেই লাখ লাখ ডলার আয়
আপনিও হবেন কোটিপতি অনলাইনে কাজ করে মোবাইল অথবা কম্পিউটার দ্বারা।
ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়



আইন

নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন কোন প্রাণী সোজা হয়ে হতে পারে না, তেমনি আইন ছাড়া কোন মানুষ দায়িত্বশীল হতে পারে না। আইন নৈতিক দিক গুলো বুঝিয়ে মানুষকে নীতি ও আদর্শ মেনে চলতে শেখায়। সুনিয়ন্ত্রিত কাঠামো সৃষ্টি করে প্রত্যেক ব্যক্তির ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ করা আইন প্রণয়নের চরম ও পরম উদ্দেশ্য। আইন সর্বদাই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা রোধ করে বঞ্চিত সমাজ কাঠামো সৃষ্টিতে সাহায্য করে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বাহন হল আইন। আইন নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে এবং সমাজবিরোধী কার্যকলাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। শুধু তাই নয়, আইন সামাজিক মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কিছু কাজ করা থেকে বিরত রাখে এবং কিছু কাজ পালন করার নির্দেশ দিয়ে সমাজজীবনকে নিদিষ্ট পথে পরিচালনা করে। ইউটিউবের ভিডিও বিশেষ আউটসোর্সিং বা অনলাইনের ভিডিওর ক্ষেত্রে আইনের কোন নীতিমালা না থাকায় যে যেরকম ভাবে পারছে ওরকমই ভিডিও দিয়ে কর্মহীনদের সাথে প্রতারণা করছে।


B. উপকারিতা


ইউটিউবে ভিডিও দ্বারা উপার্জন করা

ইউটিউবে ভিডিও দিয়ে অনেক বেকার কর্মসংস্থান করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। ভিডিওর মান ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে দিয়ে উপার্জনের দ্বার উন্মোচন করেছে। এই ভিডিওগুলো যদি আরও স্বচ্ছভাবে বাস্তবতা তুলে ধরা হতো হলে অনেক ভিউ বা সাবস্ক্রাইব পেত। কিছু দুর্বলতার কারণ মানুষের ভিউ বা সাবস্ক্রাইব প্রতি অনীহা কাজ করছে। এতে করে উপার্জনের পথ কিছুটা হলেও মন্থর গতিতে চলছে। যাই হোক না কেন এক বাক্যে স্বীকার করতে হবে বেকার সমাজের অনেকেই ভিডিও মাধ্যমে কর্মসংস্থান করে আয় করছে।

ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা

ইন্টারনেট জগতে কর্মসংস্থান করে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, এই বার্তাটি ইউটিউবের ভিডিওর মাধ্যমে প্রচারের প্রসারতা ঘটছে এবং পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। ইউটিউবে এই ভিডিও সুবিধা না থাকলে কিংবা ইউটিউব মানুষের দুয়ারে না পৌঁছালে ইন্টারনেট জগতে কর্মসংস্থান করে জীবিকা নির্বাহ করা যায় এই বার্তাটি এত দ্রুত জনে জনে পৌঁছাত না। মানুষ প্রাথমিক শিক্ষা পায় ইউটিউবের ভিডিওর মাধ্যমে। কষ্ট করতে পারলে, অধিকমাত্রায় পরিশ্রম করতে পারলেই এখন পৃথিবীতে কাজ পাওয়া যায়, যা মানুষকে স্বস্তি দেয়। কেননা, কাজ করতে পারলে অর্থ ঘরে আসবেই।

জানার আগ্রহ এবং করার চেষ্টা

ইউটিউবে ভিডিও দেখে শুধু আমাদের বেকার সমাজই না ছাত্রসমাজও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং স্বাধীন ব্যবসা করার জন্য ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। পারুক আর না পারুক কাজ করার চেষ্টা তো করছে, এই চেষ্টা আমাদের বেকার জাতীয় সমস্যার একটা বড় প্রাপ্তি। যারা চেষ্টা করছে সবাই তো আর পারবে না এটা সত্য কেননা সবাই সবকিছু পারে না। তাহলে পৃথিবীর সব মানুষ একই কাজ করত। যে দু’একজন পারবে তাতেই দেশের কল্যাণ বয়ে আনবে ধীরে ধীরে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়

ইউটিউবের ভিডিওর মধ্যে দিয়ে দেশের বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় একটা পথ ছিল মুদ্রা গার্মেন্টস সেক্টর এখন সমপর্যায়ে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে কাজ করার একটা বড় দিক হলো ঘরে বসে আয় করা যায় সারা বিশ্বে। কাজ করা যায় মায়ের কোলে বসে, দূরে যেতে হয় না মায়ের আঁচল ছেড়ে।

বেকারত্ব হ্রাস পাওয়া

আমাদের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ এবং কর্মহীন মানুষে পরিপূর্ণ। বর্ষার নদীর মত আমাদের দেশ সব সময় কর্মহীন মানুষে কানায় কানায় ভরা থাকে। ইউটিউবের আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয়ের ভিডিও মাধ্যমে অন্তত কানায় কানায় থেকে অনেকটা নিচে নেমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো আমাদের দেশের বেকার সমাজ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। এতে করে দেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

সরকারী নীতিমালা থাকা

যে মাধ্যম থেকে থেকে দেশের একটা বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় হচ্ছে সেই মাধ্যমের প্রতি সরকারের কিছুটা দৃষ্টিপাত করা উচিত। কিছু নীতিমালা বেঁধে দেওয়া সময় এখন, কারণ ইউটিউবের ভিডিও এখন বেকার সমাজ থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। ভিডিও দেখে কর্মজীবীরাও বাস্তব চাহিদার প্রয়োজনে অতিরিক্ত আয় করা অনুভব করছে। তাই তারা ইন্টারনেটের আয় দিকে ঝুঁকছে, অবসর সময়ে কাজ করার জন্য। ভিডিও দেখে মানুষ যেন সত্যিকার ভাবে উপকৃত হতে পারে এমন ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে ভিডিও দেয়, যেন-তেনভাবে শুধুমাত্র ভিডিও দিলে আয় হবে এ ধরনের মনোভাব পরিহার করে। আর এর জন্য প্রয়োজন সরকারি নীতিমালা।

C. বিজ্ঞানের অবদান ইন্টারনেটের কর্মসংস্থান আজ ঘরের দুয়ারে

সম্ভাব্য সকল উপায়ে সমাজের কাজে আজন্ম প্রাপ্ত সমস্ত ঋণ শোধ করতে হবে ছাত্রসমাজকে। সমাজ উন্নয়নের মত বিস্তৃত লক্ষ্যে প্রণোদিত হয়ে আর্ত-মানবতার জন্য কিছু করা বা সমাজ সেবা করাই হল সে ঋণ শোধের শ্রেষ্ঠ পথ। ছাত্রসমাজ নিপীড়িত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে। তারা নিরক্ষরতা দূরীকরণে যেমন কাজ করতে পারে, তেমনি দারিদ্র্য বিমোচনে তারা সহায়ক হতে পারে। আর্থিকভাবে বিপন্ন জীবনে উন্নয়নের সুযোগ ঘটাতে পারে।
ইউটিউবের ভিডিও ব্যক্তিস্বার্থ যেন গোষ্ঠীস্বার্থকে ধ্বংস করে না দেয়আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের ফলে আধুনিক জীবন ব্যবস্থা উপকার লাভের জন্য বিজ্ঞানকে জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। অনগ্রসরতার যেসব চিহ্ন জীবনে এখনও রয়ে গেছে তা দূর করার জন্য বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে। জীবন থেকে দারিদ্র্য দূর করার জন্য চাই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়, তেমনি জাতীয় জীবনে এনে দেয় সমৃদ্ধি।

সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় বলে বলতে হয় পেশাদার সমাজকর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক পদ্ধতি হল ব্যক্তি সমাজকর্ম। এর মাধ্যমে সমস্যা-গ্রস্ত ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা ও সম্ভাবনার বিকাশ সাধনের মাধ্যমে সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চালানো হয়। ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার এর মতে, “ব্যক্তি সমাজকর্ম হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে সাহায্য করা হয়, যাতে সে উন্নততর সামাজিক সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম হয়ে সুখী এবং অর্থবহ জীবন-যাপন করতে পারে।”

বিজ্ঞানের অবদান মানব কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ায় বিশ্বের বুকে মানুষের জীবনে সুখের আকর হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর কল্যাণ-ধর্মী অবদান মানুষের জীবনকে আরও কর্মের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য বিজ্ঞানের কল্যাণধর্মিতার প্রতি আহ্বান জানাতে হবে। বিজ্ঞানের অবদানের ফলে আজ ইন্টারনেটের কর্মসংস্থান যখন ঘরের দুয়ারে এসে গেছে তখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আইটি সেক্টরের ছাত্রসমাজের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে দেশের অনেক কর্মহীনদের কর্ম ব্যবস্থা হতে পারে। তারা একটু হাত বাড়ালেই জাতি বেকার সমস্যা থেকে অনেকটা লাঘব হতে পারে।

D. কাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যনিষ্ঠা

প্রত্যেক মানুষের জীবনে কোন না কোন কাজের দায়িত্ব থাকে। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে মানুষকে জগৎ সংসারে পাঠানো হয়েছে। যার যার দায়িত্ব পালনের মধ্যেই তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশের সুযোগ বিদ্যমান। বস্তুত জীবনের ভাল-মন্দ বৈশিষ্ট্য প্রকাশের ভিত্তিই হল তার জীবনের কর্মক্ষেত্র। তাই বলা যায় মানুষ কাজের দায়িত্ব নিয়েই এই বিশ্বে আগমন করেছে। জীবিকার জন্য মানুষ পেশা হিসেবে কোন না কোন কাজ অবলম্বন করে। কাজ মানুষকে জীবিকা দেয়, কাজ মানুষের জীবনের বিকাশের সুযোগ এনে দেয়। পৃথিবীতে যে জীবন মানুষ কাটিয়ে যায় সেখানে তাকে তার বয়স ও যোগ্যতার প্রেক্ষিতে কাজ করার দায়িত্ব পালন করতে হয়। জীবনের প্রথম এবং শেষ দিকের কিছুটা সময় বাদ দিয়ে মাঝখানের পুরু সময়টাই কাজের সময়। কাজের এই সময়টুকু যথাযথ কর্তব্যপরায়ণতার সাথে অতিবাহিত করলেই জীবনের দায়িত্ব পালন সম্ভবপর। তবে জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত এই জীবনের পূর্বে ও পরের অংশেও মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। কাজের আকার যত ছোট বা যত বড় হোক প্রত্যেক মানুষেরই নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে পরিচয় প্রদান করা দরকার। প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ সীমানায় নিজ নিজ কাজ পরম আন্তরিকতার সাথে আগ্রহ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে তাহলে জাতির প্রতি সকল কর্তব্য পালন করা হবে। জাতির বড় হওয়ার জন্য প্রত্যেক মানুষকে তার মেধা ও মনন উজাড় করে ঢেলে দিতে হয়। আর এই জন্য প্রয়োজন কর্তব্যনিষ্ঠার। অপরে কি করেছে বা কি করে নি, সেটা বড় কথা নয়, নিজে কি করতে পেরেছি, কাজে কতটুকু সফলতা দেখিয়েছি সেটাই বড় বলে বিবেচিত হবে। কর্তব্যনিষ্ঠায় কাজে যেমন সফলতা আসে, তেমনি আসে নিজের দক্ষতা ও দক্ষতার ওপর আস্থা। কর্তব্যনিষ্ঠা বৃহত্তর কর্তব্য সম্পাদনের পেছনে শক্তি হিসেবে যথার্থ মর্যাদার অধিকারী হতে চাইলে কর্তব্যনিষ্ঠাই হবে প্রধান অবলম্বন। ইউটিউবের আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয়ের ভিডিও মাধ্যমে সবার কর্তব্যনিষ্ঠাই হোক জাতীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।

E. সেবাপরায়ণ মানুষকে মহীয়ান করে তুলে

বৃহত্তর জনগোষ্ঠী উপকার করার নামই জনসেবা। জনসেবা মানব জীবনের একটি মহৎ গুণ। মানুষের দুঃখ-বেদনায় সহমর্মিতা প্রকাশ করে মানুষ যখন একে অপরের উপকারে নিয়োজিত হয় তখন তাকে বলা হয় জনসেবা। আত্মস্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে পরের জন্য কিছু করাই জনসেবা বলে পরিচিত। পরের দুঃখে কাঁদতে শেখাই মনুষ্যত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। স্বার্থ-মগ্ন এই পৃথিবীতে আত্মসুখে মগ্ন না হয়ে মানুষ যদি তার চারপাশের মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তাহলে তার মধ্যে এই মহৎ গুণের পরিচয় মিলে। বৃহত্তর জনসমাজের কল্যাণে ব্রত নিজেকে নিয়োজিত করে মানুষ অন্যকে সুখ দিতে পারে আবার নিজেও সুখ অনুভব করতে পারে। এই প্রেক্ষিতে জনসেবা তথা পরোপকারের প্রত্যাশা মানুষের যেমন অভিপ্রেত, তেমনি মানব জাতির জন্য তা অপরিসীম কল্যাণকর। জীবনের যথার্থ বিকাশের মাধ্যমে এই শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ ঘটে। কিন্তু বিকাশের পথে আছে অন্তরায়। সেজন্য মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনের যথার্থ সুখ অনুভব করতে পারে। পরস্পর সহমর্মিতা থেকেই জনসেবার প্রবৃত্তির উন্মেষ ঘটে। বহু মানুষের সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতিতে মানব জীবন সুখময় হয়ে ওঠে।

বিশ্বের সভ্যতা সংস্কৃতির বিকাশ যুগ যুগ ধরে অনেক মানুষের নিরন্তর সাধনার ফল। কিন্তু সেখানে মানুষ যদি পরস্পর বিমুখ হয়ে থাকে তাহলে নিজ নিজ অপূর্ণতা ও অক্ষমতাকে ঢেকে রাখার উপায় থাকে না। তাই মহানুভব মানুষ পরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে – জনসেবার মর্মবাণী এভাবে জনসমাজে কাজ করে। সমাজে অক্ষম, অসমর্থ মানুষের অভাব নেই বরং দুঃখী-দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সমর্থ মানুষ যদি আত্মনিয়োগ না করে তাহলে বিশ্বের জীবন দুঃখময় হয়েই থাকবে। তাই অসহায় দীনদরিদ্র মানুষের জন্য যুগে যুগে মানুষ সেবার হাত প্রসারিত করেছে। মানব জীবনের দুঃখ দূর করে মুখে হাসি ফোটানোর ব্রতই সেবাপরায়ণ মানুষকে মহীয়ান করে তুলছে। সেবা দান করে মানুষ আত্মতৃপ্তি অনুভব করছে আর পৃথিবীকে সুখের পরশ দান করছে। সেবাপরায়ণের মাধ্যমে নিজেকে মহীয়ান করতে পারেন ইউটিউবের আউটসোর্সিং কিংবা অনলাইনে আয়ের ভিডিও মাধ্যমে। যারা এ ধরনের শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি করেছেন তারা কর্মহীন ও দুঃখী-দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে পারেন স্বচ্ছ ভিডিও তৈরির মাধ্যমে। এমনি করে দেশের বেকারত্ব ঘুচিয়ে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারেন আর নিজেও হতে পারেন আত্মতৃপ্ত।

F. জনসেবার পথ ধরে নিজেকে উৎসর্গ করা

মানুষের জীবনে অভাব-অনটনের শেষ নেই। দুঃখের যন্ত্রণা বহুমুখী হয়ে মানুষকে প্রতিনিয়ত পীড়ন করে। চারপাশের মানুষের সুখের সঞ্চার করতে হবে। একদিকে বিত্তবান লোকেরা আনন্দ সাগরে মগ্ন থাকে, অপরদিকে বহু মানুষের জীবনে দুঃখ বিরাজ করে। সেই জন্য পরোপকারী মানুষ দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর করার সাধনায় রত থাকেন। প্রত্যেক সমর্থ মানুষের পক্ষে জনসেবার কাজ করা সম্ভব। যে ব্যক্তি যেখানে আছে তার সে অবস্থান থেকেই মানুষের সেবা করতে পারে। এর ফলে মানুষের জীবনের বৈচিত্র্যময় পরিসরে পরোপকারের মহান আদর্শ রূপায়িত হয়ে ওঠবে এবং মানব জীবন থেকে দুঃখ দূরীভূত হবে। মানুষ যদি পরস্পরকে সাহায্য না করে তাহলে জীবন থেকে অভাব কখনো নিঃশেষে দূর করা যাবে না। জীবনের সুন্দর বিকাশের জন্য মানবসেবার মাধ্যমেই অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠতে পারে। মানব জাতির সমস্যার শেষ নেই, ক্ষুদ্র গৃহকোণ থেকে সুবিশাল আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত অসংখ্য সমস্যা প্রতিনিয়ত মানব জীবনকে সংকটাপন্ন করে তুলছে। এসব দূর করার জন্য বহু মানুষের সাধনাও কার্যকর হচ্ছে। তাই জনসেবা মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি।
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ অনেকেই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এদের জীবনের দৈন্যদশার অবসান ঘটাতে চাইলে বিত্তবানদের সহায়তায় জনসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বিশেষত আমাদের নিজেদের জাতীয় জীবনের অনগ্রসরতা ও দীনতার কথা বিবেচনা করে সকল দেশবাসীর সেবার কাজে অংশগ্রহণ করা দরকার। সেবার জন্য অর্থের গুরুত্ব তত নয়, যতটুকু আগ্রহ ও আন্তরিকতার দরকার। মানুষকে সেবার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারলেও মানুষের কল্যাণ করা যায়। জনসেবাকে মানব জীবনের সর্বোত্তম কাজ বলে বিবেচনা করতে হয়। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এমন চমৎকার উপায় আর নেই। সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার এমন বিশিষ্ট উপায়কে মানুষ চিরদিন মর্যাদা-যুক্ত বলে বিবেচনা করেছে এবং জনসেবার পথ ধরে নিজেকে উৎসর্গ করেছে। এই চেতনা সকল মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হলে বিশ্বের জীবন আরও সুখময় হয়ে উঠবে। এই সবটুকুর তৃপ্তি ভোগ করতে পারেন যারা মানব সেবার জন্য ইউটিউবে শিক্ষামূলক ভিডিও দিয়ে থাকেন, তারা আরও দায়িত্বশীল এবং পরোপকারী মানসিকতা নিয়ে যদি ভিডিও তৈরি করেন। আশা করি ভবিষ্যতে তাই করবেন।

G. ছাত্রসমাজের ভূমিকা

পরোপকারের মহান ব্রতে ছাত্র জীবনে উদ্দীপ্ত হতে হবে। নিজের লোভ-লালসা মিটানোর দিকে বেশি মনোযোগী হলে জীবনের সংকীর্ণতা প্রকাশ পায়। পরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করলে তাতে জীবনের সার্থকতা ফুটে ওঠে। নিজের সামর্থ্যের মধ্যে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। নিজের জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও ফাঁকে ফাঁকে যখন যা সামনে আসে আর যতটা পারা যায় ততটাই কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে ঝরাতে হবে। সমাজের কল্যাণ সাধন ছাত্রদের কর্তব্য তাই ছাত্রদেরই বিবেচনা করা দরকার। যে দেশে একটা ছোট্ট কাজের জন্য পায়ের জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায় সেই দেশে একটু সহযোগিতার সহানুভূতি পেলে অনেকের জীবন কর্মময় হয়ে উঠতে পারে, শুধুমাত্র ছাত্রসমাজের ভূমিকায়।




আমার পরবর্তী লেখা, প্রচন্ড ঝড়ে যেসব দম্পতির বুকের ভিতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে, তাদের নিয়ে-


No comments:

Post a Comment