গর্ভের সন্তান কোনদিন স্বাভাবিক জীবন পাবে না সংসার, সমাজ ও পৃথিবীতে
মানুষ একটি নাম, কিন্তু এর ভাগ দুটো। নর এবং নারী। নর আর নারীর যৌথ সমন্বয়ে জন্ম হয় সন্তান। যাকে বলা হয় মানুষ। নর আর নারীর যৌথ সমন্বয়ে সন্তানের জন্ম হয় ঠিকই কিন্তু এক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। নারী অর্থাৎ 'মা', মা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রায় দশ মাস গর্ভে ধারণ করে থাকে। এই ১০ মাস আনন্দ যন্ত্রনা কষ্ট সবই শুধু মা ভোগ করে। সন্তানের জন্ম দেয়ার আনন্দ বাবা-মা উভয়ে ভোগ করে কিন্তু ১০ মাস গর্ভে ধারণ করা এবং প্রসব যন্ত্রণার কষ্ট শুধুই মা ভোগ করে থাকে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মানুষ ভেদে (নারী) একেক জনের একেক রকম কষ্ট করতে হয়।
কেউ গর্ভে ধারণে পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পরে, সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত অসুস্থ থাকে। গর্ভে ধারণ করা থেকে শুরু করে প্রসব করা পর্যন্ত প্রায় দশ মাস মা (নারী) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক কষ্টের যন্ত্রণা ভোগ করার সাথে নানা ধরণের অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতিও উপভোগ করে থাকে।
সন্তান জন্ম দেয়া মানে বাবা মা হওয়া। মানুষ হয়ে মানুষের জন্ম দেয়া। এর থেকে বড় আনন্দ পৃথিবীতে আর কিছু নেই। মানুষ সন্তান হয়ে জন্ম নেয় আবার সেই মানুষ এক সময় সন্তানের জন্ম দেয়। প্রথম বাবা মা ডাকে পরে বাবা মা ডাক শোনে। এটাই চিরন্তন, প্রকৃতির নিয়ম। এভাবেই দুনিয়ার বংশ বিস্তার বা ক্রমবর্ধমান ভাবে উত্তরাধিকার সৃষ্টি হয়ে থাকে। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই ধারাবাহিক নিয়ম বজায় থাকবে। জন্মের এই ধারাবাহিকতা শুধু মানুষের মধ্যে বিস্তার করছে তা না। প্রাণী জগৎ উদ্ভিদ জগত সর্বত্রই জন্মের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করছে। সবাই একই নিয়মে একই ধারাবাহিকতায় বংশবিস্তার করছে। যেহেতু মানুষ দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জীব তাই মানুষ হয়ে মানুষের জন্ম দেয়া বা বংশবিস্তার করার অনুভূতি প্রকাশ করার অনুভূতি পৃথিবীর সৃষ্টির অনন্য প্রাণী থেকে আলাদা। যদিও অন্য প্রাণীরা তাদের সমাজে তারা একিভাবে অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে। আমি শুধু মানুষের অনুভূতির কথা বলছি। প্রতিটা মানুষ চায় বাবা-মা হতে, সন্তান জন্ম দিতে। এই চাওয়া অপূর্ণও থাকে হাতেগোনা খুব কম সংখ্যক মানুষের। এই অপূর্ণতা বিভিন্ন কারণে অপূর্ণ থাকে। আজ অপূর্ণতা থাক, পূর্ণতার কথাই বলা যাক। নিজের সন্তান যাকে গর্ভকালীন অবস্থায় নানারকম শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও নিজের গর্ভে রাখে পরম যত্ন সহকারে। শেষের দিকের সময়টুকু যেন কিছুতেই কাটতে চায় না, কিছুতেই শেষ হতে চায় না অপেক্ষার প্রহর। কবে আসবে সেই দিন, কখন আসবে সেই মুহূর্ত, সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় নারী অস্থির হয়ে ওঠে। তবে নানা সমস্যা মোকাবেলা করে শেষে মা সন্তানকে প্রথম দেখার অনুভূতি সম্পূর্ণ অলাদা। এই অনুভূতি শুধুই অনুভব করার ভাষায় প্রকাশ করার না।
মানুষ হিসেবে নারী জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে মা হওয়া, তাই মা হওয়া প্রতিটা নারীর ভিতরেই এক চমৎকার রোমাঞ্চকর অনুভূতির জন্ম দেয়। নারীর গর্ভে সন্তান আসার পর থেকেই মায়ের মনে প্রকাশ হীন এক দারুন অনুভুতি কাজ করে। পৃথিবীতে নারী সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে মা হয়ে নারীত্বের পূর্ণতা লাভ করে। মা বুঝতে পারে তার ভিতরে ধীরে ধীরে একটি জীবন বেড়ে উঠছে। ভ্রূণের শুরু থেকেই মা আর সন্তানের মাধ্যে এক শক্তিশালী অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। মা তার গর্ভের সন্তানের সাথে অচেতন আনমনে কত কথা বলে সে শুধু মা-ই জানে। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকে প্রসব পর্যন্ত পুরো সময় সন্তান ও মায়ের মধ্যেকার এক অবিচ্ছেদ্য অসাধারণ শক্তিশালী ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে।
প্রতিটা নারীর জীবনেই মা হওয়াটা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। মা হওয়ার পর জীবনে যোগ হয় এক নতুন সংযোজন। গর্ভকালীন দশ মাস সময় পার করে মা যখন সন্তানকে প্রথম দেখে তখন কি অনুভূতি তা কোনভাবেই ভাষায় প্রকাশ করার না; তা শুধুই অনুভবের। মা হওয়ার অনুভূতি এক নতুন রূপ এনে দেয় নারী জীবনে। একটি নারীর জীবনে সবচেয়ে মধুময় অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা হলো মা হাওয়া। সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে নারী প্রায় দশ মাস পার করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। গর্ভাবস্থায় নারীর জীবনে শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে আসে নানান পরিবর্তন। নারী তার অপূর্ণতা পূর্ণ করে নারী মা হয়ে। মা হবার আনন্দ পৃথিবীর কোন আনন্দের সাথেই তুলনা হয় না।
নারী তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করে গর্ভধারণ থেকে প্রসব করা পর্যন্ত। গর্ভাবস্থায় নারী যে ১০ মাস সময় পার করে থাকে, এই লম্বা সময়টা পার করা সত্যিই একজন মানুষের জন্য খুবই কঠিন। কঠিন জেনেও কঠিন সময় পার করে পৃথিবীর প্রতিটা নারী। গর্ভাবস্থায় মেয়েরা খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে, ঝুঁকি এড়াতে তখন আগত সন্তানের মাকে খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। এই সময় একটা ছোট্ট ভুলও অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই হবু মাকে সব সময় মানসিকভাবে চিন্তিত থাকতে হয় কখন কোন ভুল হয়ে যায় এই ভাবনায়। মা সব সময় আগত সন্তানের চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকে। মাতৃত্বকালীনের শেষের সময়টুকু যেন কিছুতেই পার হতে চায় না, অনেক লম্বা মনে হয়। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা পর-ই একটি নারী মা হওয়ার স্বাদ উপভোগ ভোগ করে। গর্ভাবস্থায় নারী নানা সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলো খুব বিপদজনক না হলেও সবার উচিত এসব সমস্যার দিকে মনযোগী হওয়া।
‘মা’ এই শব্দের সাথেই মিশে আছে সন্তানের প্রতি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। মা গর্ভাবস্থা থেকেই পরম যত্নে বুকে আগলে রেখে যথাক্রমে সন্তান বড় করে মানুষ করে তোলে, তবুও মা সন্তানের কাছে কখনো কিছু পাওয়ার আশা করে না। মা শুধু তার সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে উজার করে দেয়, পৃথিবীতে মা-ই পারে সন্তানের জন্য স্বার্থহীন ভাবে নিজের সবটুকু উজার করে দিতে। মা আর সন্তান এমন এক শক্তিশালী ঐশ্বরিক ভালোবাসার বন্ধন আবদ্ধ থাকে দুনিয়ার কোন ঝড় তাদের আলাদা করতে পারে না। নারীর গর্ভে সন্তান আসার পর থেকেই মা সন্তানের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হতে থাকে, সেই বন্ধন ধীরে ধীরে মজবুতই হয়; এ বন্ধন আর কখনো ছিঁড়ার নয়। কেননা, সন্তান নারীর নাড়ি ছিঁড়া ধন। শুধু মা-ই জানে পৃথিবীতে সন্তান আনা কতটা কষ্ট, মায়ের কতটা ত্যাগের পর সন্তান পৃথিবীতে আসে। এই ত্যাগের মহিমায় অন্যরকম অনুভূতি আনন্দের সাথে উপভোগ করে শুধুই মা। মা কেবলই মা! মা শুধু মা!
মাতৃত্বেই নারী জীবনের পূর্ণতা। সন্তান জন্মদানের মাধ্যমেই নারী এই পূর্ণতা পায়। নারীর মা হতে দীর্ঘ দশ মাস পাড়ি দিতে হয়। মাতৃত্ব নারীর এক নতুন জন্ম, এক অদ্ভূত অনুভূতি। নারীর চিরন্তন পরিচয় নারী মা। ‘মা’ ডাক শুনার জন্য প্রতিটি নারী তার মনের গভীরে স্বপ্ন লালন করে থাকে, প্রকৃতিগতভাবে নিজের অজান্তেই নারীর ভিতর এই স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে। কারণ সৃষ্টিকর্তা নারীর মাতৃত্বের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর উত্তরাধিকারের ধারা বজায় রাখার দায়িত্ব দিয়েছে নারীর ওপর। মাতৃত্বের স্বাদ ভোগ করতে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে জেনেও নারী সন্তান জন্ম দেয়। পৃথিবীর বুকে নিজে সন্তান এনে নারী তৃপ্ত হয়। অনেক নারী মাতৃত্বের স্বাদ ভোগ করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, তবুও নারী মা হয়। নারী জীবনে সব চাইতে ঝুঁকিপূর্ণ সময় প্রসবকালীন সময়। প্রসব ব্যথা কারও বেশি আবার কারও কম হয়ে থাকে। প্রসব ব্যথা প্রাকৃতিক বিষয়, এই ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়ার তেমন একটা পথ নেই। যার ভাগ্যে যতটা কষ্ট আছে ততটাই সইতে হবে। নারীর সন্তান জন্মদান যতোটা আনন্দের, ততোটাই কষ্টের। নারী হিসেবে সন্তান ধারণ, প্রসব ও লালন-পালনে মায়ের ভূমিকা দুনিয়ার কোন কিছুর সাথেই তুলনা হয় না।
আগত সন্তানের জন্য মায়ের পরে যার ভিতরে অনুভূতির প্রচন্ড ঝড় উঠে সে হলো সন্তানের বাবার। মা গর্ভে ধারণ করে তাই মায়ের কষ্ট অনেক বেশি আবার মা তার নিজের গর্ভে সন্তান পরম যত্নে লালন করে বলে মায়ের আনন্দের আবেগও মধুময়। এর কোনটাই পুরুষ মানে সন্তানের বাবার অনুভব করার সৌভাগ্য হয় না। তবুও বাবা, সন্তানের জন্য বাবার ভিতরে অপ্রকাশিত এক অদ্ভুত ব্যাকুলতা থাকে। অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় থাকা বাবারও যেন এই দশ মাস সময় কাটতে চায় না। সন্তান কবে পৃথিবীতে আসবে, কবে সন্তানের মুখটা দেখবে, কখন সন্তানের মুখের সাথে নিজের মুখটা মিলিয়ে বাবার ভিতরটা তৃপ্তিতে ভরে তুলবে। সন্তানের জন্য বাবার অপেক্ষার সময় যেন কিছুতেই কাটছে না। অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে যখন সন্তানের মুখ দেখে তখন নিজেই নিজেকে আনমনে বলে আজ আমি তোর বাবা, তুই পৃথিবীতে আসাতেই আমি বাবা হয়েছি। হে বিশ্ববাসি তোমরা দেখো আমার সন্তান, আমি বাবা! কথাগুলো একটিও ভাষায় প্রকাশিত নয়, কেবলই ভিতর আবেগ, উচ্ছ্বাস, আনন্দের ঢেউ।
সন্তান প্রস্রাব করার পর বাবা-মার ভিতরের আবেগ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু লুকানো যায়না। ভিতরের আবেগ চেহারায় ফুটে ওঠে নিজের অজান্তেই। ভেসে ওঠে বাবা-মা চোখে মুখে ব্যবহারে মধ্যে। এখানে একটি ছোট্ট বাস্তব ঘটনা বলতেই হয়, আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক ছেলে সন্তানের বাবা হন। পরিচিত সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান। আমি ভদ্রলোককে রাস্তায় দেখি হাসতেছে, কারো সাথে না, একা একা হাসতেছে। আমাকে তিনি দেখেননি। আমি দেখলাম আর ভাবলাম, একদিন হলো ছেলের বাবা হয়েছে তার আনন্দে হাসছে নিজের অজান্তে। ভদ্রলোক নিজেও জানে না তিনি অকারণে হাঁসছেন। উনার খুশির কারণ আমার বুঝতে সময় লাগেনি। আমি জানি উনি নতুন বাবা হয়েছেন, তাই ওনার ভিতরের আনন্দের আবেগ বাইরে বেরিয়ে আসছে। এজন্য নিজের অজান্তে রাস্তায় বোকার মত একা একা হাঁসছেন। এমনটা সব মানুষের বেলায় হয়, সব বাবা-মা বেলায় হয়। শুধু বিভিন্ন মানুষের প্রকাশ ভঙ্গি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
দীর্ঘ দশ মাসের নানারকম আনন্দের আবেগ অনুভূতি আর মধুময় মুহূর্তগুলো এক নিমেষে স্তব্দ হয়ে যায় প্রসবের পর বা প্রসবের কয়েক দিন পর, কোন কোন দম্পতির জীবন। যখন বাবা মা জানতে পারে তাদের সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক নয়, তাদের এত আকাঙ্ক্ষিত সন্তান কোনদিন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পাবে না এই সংসারে এই সমাজে এই পৃথিবীতে; তখন তাদের অনুভবের অনুভূতিতে কি রকম আঘাত হানে! এত আনন্দের খুশির অনুভূতি যখন ফিকে হয়ে যায় তখন সেই বাবা মার ভিতরের অনুভুতি কিরকম হয়! কতটা ঝড় ওঠে ভিতর অনুভূতিতে, কিভাবে ভেঙে যায় বুকের পাঁজরগুলো!
আমার পরবর্তী লেখা, ইউটিউবের ভিডিওর সুফল কুফল
তার পরবর্তী লেখা, প্রচন্ড ঝড়ে যাদের বুকের ভিতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে, তাদের নিয়ে-
No comments:
Post a Comment