Pages

আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি

আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি




আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি

পশু-পাখী-কীট-পতঙ্গ ও মানুষ সব মিলিয়েই প্রাণী জগৎ। পৃথিবীতে পরিবেশের উপর নির্ভর করে প্রাণী জগতের অস্তিত্ব টিকে আছে এবং টিকে থাকতে হবে পরিবেশের উপর নির্ভর করেই। আজ এই নির্ভরতা নির্ভর করছে মানবের মানবতার উপর, আজকের পরিবেশ কালকে কতটা স্বাস্থ্যকর থাকবে এবং উত্তরাধিকারীর জন্য কতটা বাসযোগ্য রেখে যাবে তা বর্তমানের
পরিবেশ দূষণকারী মানব জাতিই বলতে পারবে! জেনে হোক আর না জেনে হোক আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি।


আজ পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্ক নমনীয় হওয়া অত্যন্ত জরুরি কেননা উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধারক ও বাহক হচ্ছে পরিবেশ। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ফলে মানবের মানবতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে প্রাণীর অস্তিত্ব ধ্বংসের সম্মুখীন করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ দূষিত পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণীর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। তাই পরিবেশ বিপর্যস্ত হলে মানুষসহ সব প্রাণীরই ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। পৃথিবীর সুস্থ-ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। আর তা করতে হবে আমাদেরই।


পরিবেশকে কেন্দ্র করেই মানুষ বেঁচে থাকে আবার মানুষই পরিবেশকে দূষিত করে। মানুষ মানে আমরা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করেই চলেছি বেঁচে থাকার ক্ষুদ্র স্বার্থে, নিজেদের স্বার্থে পরিবেশকে অপব্যবহারের করার ফলে পরিবেশ ক্রমান্বয়ে প্রাণীর প্রতিকুল হয়ে উঠেছে; যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রাণীকুলকে রোগ্ন করে ফেলছে। বর্তমান মানুষ তার বর্তমান প্রয়োজনে স্বার্থপরের মত পরিবেশকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতের জন্য দূষিত পরিবেশ রেখে যাচ্ছি। একবারও ভাবছি না আমাদের উত্তরাধিকারের জন্য আমরা কতটা নির্ভরযোগ্য সুস্থভাবে বাঁচার উপযোগী পরিবেশ রেখে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা বর্তমানে সুস্থভাবে বেঁচে আছি আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পৃথিবীতে এনে এক ভয়ানক দূষণের মধ্যে ফেলে যাচ্ছি।


পরিবেশ বলতে মানুষের বসবাসের জন্য উপযুক্ত এলাকাকে বোঝানো হয়। মানুষের চারপাশের আলো, বাতাস, মাটি, পানি, পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, খাল-বিল, বন-জঙ্গল, পশু-পাখি এসব মিলিয়েই পরিবেশের সৃষ্টি। এই পরিবেশের সঙ্গে মিলে-মিশে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। প্রাণী জগতের জীবন-যাপনের উপকরণ এই পরিবেশ থেকে সংগৃহীত হয়। আবার সেসব উপকরণ ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত অংশ পরিবেশেই ফেরত যায়। পরিবেশ থেকে উপকরণ গ্রহণ ও বর্জনের মধ্যে ভারসাম্য থাকা বাঞ্ছনীয়। আর যদি না থাকে তাহলেই সৃষ্টি হয় পরিবেশ দূষণের। জনসংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি, নগরায়ণ, অপরিকল্পিত কলকারখানা প্রতিষ্ঠা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার, বনভূমি উজাড়, জলাবদ্ধতা, মরুকরণ ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হয়ে মানুষ ও প্রাণী জগতের ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব ক্রমেই বিপন্ন করে তুলছে।


প্রকৃতির বিরুদ্ধে যখন থেকে মানুষের আগ্রাসন শুরু হল তখন থেকেই পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত। পরিবেশের মধ্যে থাকা বিভিন্ন বস্তু যা প্রাকৃতিক সম্পদ, বাস্তুর ও মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে তাকেই দূষণ বলে। প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিণের একাধিক কারণ আমাদের সামনে দণ্ডায়মান। বাস্তুবপ্রেক্ষিতে দেখা যায় দূষিণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিকভাবে যতটা না প্রভাবিত হচ্ছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে মানবসৃষ্ট। বর্তমানে পরিবেশ দূষণের একটি বড় উৎসস্থল হচ্ছে শিল্প ইউনিটগুলো; কেননা, দ্রুত শিল্প সম্প্রসারণ ফলে পরিবেশের উপর তাৎপর্যপূর্ণ চাপ সৃষ্টি করছে। বন-জঙ্গল কেটে মানুষ ফসল উৎপাদন করছে, গৃহ তৈরি করছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। শিল্প-বিপ্লবের ফলে অসংখ্য কলকারখানা সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করছে। ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে জমির ক্ষতি করা হচ্ছে। যানবাহনের কালো-ধোঁয়া থেকে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস। বিবিধ উৎস থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে তেজস্ক্রিয় পদার্থ এই ভাবেই আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি।
আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছিআমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি

শিল্প বিপ্লবের নামে অবাধে সৃষ্টি হচ্ছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এসব শিল্পায়ন বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে ভয়াবহ বায়ু দূষণের ফলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হবে এবং মানুষসহ সকল প্রাণীর জন্য হবে হুমকিস্বরূপ।


দিন দিন মানুষেরসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ভয়াবহ রূপ লাভ করায় পানি, মাটি ও বাতাসের ওপর চাপ পড়ছে। মানুষের ব্যবহারের জন্য শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া থেকে উৎপন্ন হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশের জন্য দারুণ ক্ষতির কারণ হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের আরও শক্তি অর্জনের জন্য পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ দূষিত হয়ে মানব জাতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।


পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন আজ চরম সংকটে পতিত হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি সরাসরি পৃথিবীকে আক্রমণ করছে। ফলে মানব জীবন আক্রান্ত হচ্ছে মারাত্মক ব্যাধিতে। আবার বিশ্ব জুড়ে খরা-অনাবৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, তুষারপাত ও ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়ে মানব জীবনকে করে তুলছে সংকটাপন্ন। বাতাস, পানি ও শব্দ এই তিন দিক থেকে দূষণের শ্রেণী নির্ণয় করা যায়। বাতাসে জীবের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর এমন পদার্থ বেশি হলে তাকে বলা হয় বায়ু দূষণ। এই বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হল ধোঁয়া, ধুলা-বালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি। তেল পুড়লে সেই ধোঁয়া থেকে সালফার-ডাই-অক্সাইড, যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেনঞ্জোপাইরিন প্রভৃতি হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগের কারণ। কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য বিনষ্ট করে। আণবিক ও পারমানবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে ক্যান্সার রোগ হতে পারে। তেজস্ক্রিয়ের প্রভাবে অঙ্গ বিকৃতিও ঘটতে পারে।


প্লাস্টিক এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যা সহজে পচে না এবং যার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে প্রচুর সময় লাগে। প্লাস্টিক পরিবেশের ওপর এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, মানুষের ব্যবহৃত সিনথেটিক বর্জ্য পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য পরিবেশকে দূষণ করে স্থলজ, জলজ ও বনজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। অতিমাত্রায় প্লাস্টিক ব্যবহার এবং ব্যবহার শেষে যেখানে-সেখানে ছুঁড়ে ফেলে আমরাই পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে আর সার্বিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ছে মানুষসহ সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর। যেহেতু প্লাস্টিক অপচ্য পদার্থ সেহেতু সিনথেটিক বর্জ্য শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, মাটি ও উদ্ভিদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উদ্ভিদজগত ধ্বংস হওয়া মানে সমস্ত প্রাণীজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এমন দ্রব্য ব্যবহার রোধ না করার কারণে মাটি ঊর্বরতা হারিয়ে দূষণে পরিণত হচ্ছে ফলে উদ্ভিদের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। কমছে গাছপালা বাড়ছে মানুষ এতে করে পরিবেশের ভারসাম্যতা ক্রমেই বেড়েই যাচ্ছে। এইভাবেই আমরাই আমাদের পরিবেশকে দূষণে পরিণত করছি।


প্লাস্টিক ভঙ্গুর নয় বলে ব্যবহার করতে অনেকটাই সুবিধাজনক তাই দিন দিন আমরা অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি প্লাস্টিকের উপর সেই সাথে কদর বেড়েছে পলিথিনেরও। ব্যবহারের সুবিধার্থে আমরা এসব পর্ণ্যের প্রতি অন্ধ গেছি বলেই ক্ষতিকারক দিকগুলো দেখছি না। সামান্যতম বিবেচনা করছি না আমরা আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশকে কতটা বিপর্যয় পর্যায় নিয়ে যাচ্ছি; বিবেচনা করলে আজকে আমাদের পরিবেশটা এত দ্রুত দূষণীয় হয়ে পড়তো না। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের শেষে যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছি, এইসব বর্জ্য পদার্থগুলো অপচনিয় বা অদ্রবিভূত হওয়ার ফলে দূষিত করছি আমরা আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন বায়ুমণ্ডল, বায়ুমণ্ডলের সাথে সাথে দূষিত করছি মাটি ও পানি। বায়ুমণ্ডল বা পরিবেশ যাই বলিনা কেন এই বায়ুমণ্ডল ছাড়া আমরা এক সেকেন্ডও বেঁচে থাকতে পারবো না, তবুও আমরাই আমাদের পরিবেশ দূষিত করছি।


শহর এলাকার বাসাবাড়িতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে বর্জ্য তৈরি হয় কিছু মানুষের খামখেয়ালিপনায় রাস্তাঘাট বা অলিগলি ভরে থাকে বাসাবাড়ি বর্জ্যে। আমরা যেখানে-সেখানে রাস্তায়, অলিতে-গলিতে ময়লা ফেলে দেই। এসব পচনিয় বর্জ্য ফেলে রাখার কারণে বায়ুমণ্ডল বা পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এই জঘন্য ছোট মানসিকতার ঘৃণাজনক কাজ প্রতিনিয়তই করছি আমরা, তা যে কতটা ক্ষতিকারক এটা আমাদের তুচ্ছ বিবেচনার বিষয়। এইভাবে বাসাবাড়ির আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে পরিবেশ দূষণ করাটা সত্যি খুবই দুঃখজনক। পকেটমাইদের মতো নিজেকে বাহবা দেই বাসার ময়লা রাস্তায় ফেলার সময় কেউ দেখেনি বলে। আমাদের বিবেকবোধের অবক্ষয়ের কারণে এইভাবেই ক্ষতি করছি আমার আমাদের নিজের পরিবেশ।
আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি
সাম্প্রতিককালে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করছে। জটিলতার প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির আধিক্য। মানুষের সংখ্যা বাড়ার ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতির মধ্যে। বন-জঙ্গল কেটে বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে বসবাসের জন্য। আবাদি জমি নষ্ট করে কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে। কলকারখানার বর্জ্য আবর্জনা ইত্যাদি নদ-নদীতে ছড়িয়ে পড়ে পানি দূষণ করছে। মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য বিবিধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পক্ষে কলকারখানা অপরিহার্য হলেও সেগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠার ফলে পরিবেশের দারুণ ক্ষতি করছে। মানুষ বেশি হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে যানবাহনের কালো ধোঁয়া যা বায়ুমণ্ডলের বা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর।

পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিবেশ দূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জাতিগত বিদ্বেষ, আধিপত্যবাদের প্রভাব, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সব মিলিয়ে বিশ্বে যে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে তার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্বে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন জটিল অবস্থায় নিপতিত হচ্ছে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানুষের জন্য সব সময় কল্যাণ বয়ে আনবে এমন ধারণাও সমীচীন নয়। সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। পরিবেশ দূষিত হলে মানুষ, জীবজন্তু, পশু-পাখি, গাছপালা ও আবহাওয়ার উপর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। দূষিত পরিবেশে বসবাসকারী মানুষের সংক্রামক ব্যাধি, হৃদরোগ, ক্যানসার ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়; মাটি দূষণে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। এভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হয়।


মানুষের নানা রকম চাহিদা মেটাতে উজাড় করেছে বনজ সম্পদ। আবাদি জমি, আসবাবপত্র তৈরি ও জ্বালানি জন্য অবাধে ধ্বংস করা হচ্ছে বনের পর বন। গাছ কমে যাওয়ার ফলে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানব জাতিসহ সকল প্রাণীজগৎ। বনাঞ্চলের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বনের নানা প্রজাতির পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ। এতে করে ভারসাম্যহীন হয়ে পরছে প্রাণীকুল ও পরিবেশ। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকা অত্যন্ত জরুরি তা দিন দিন ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার ফলে দেখা দিচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়।


ফসল অধিক ফলনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের রাসায়নিক সার। এসব সার ব্যবহারের ফলে মাটির আর্দ্রতা নষ্ট হচ্ছে কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা। মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার ফলে অনেক বন-জঙ্গল বিনষ্ট হচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে প্রকৃতির ভারসাম্যতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এতেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের পরিপূরক। উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় করে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অক্সিজেনের মাধ্যমে। পৃথিবীতে প্রাণী ছাড়া উদ্ভিদ আর উদ্ভিদ ছাড়া প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করাই অর্থহীন।


পরিবেশকে সুস্থ বা দূষণমুক্ত রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে গাছ। একমাত্র মানব-প্রাণীর সচেতনতা এবং অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণ ও বনজ সম্পদকে রক্ষা করে অতিরিক্ত বায়ু দূষণের মাত্রাকে সহনীয় পর্যায় রাখা সম্ভব। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বাস্তুতন্ত্রের যেসব প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ঐসব প্রাণী টিকিয়ে রাখাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষণের ফলে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। প্রতিবছর পরিবেশ দূষণ জনিত রোগের কারণে সারা বিশ্বে যেখানে মৃত্যুর গড় হার ১৬ শতাংশ আর সেখানে শুধু বাংলাদেশেই মৃত্যুর হার ২৮ শতাংশ। তাই সুস্থ পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা আমাদের সকলেই গুরুত্বসহকারে ভাবা উচিত।
আমরাই আমাদের পরিবেশ বিষাক্ত করছি

সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশের। পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ পরিণামের কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশকে দূষণ থেকে মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ব্যাপারে বিশ্বে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করতে হবে। বায়ু দূষণের বেলায় কীট নিধনে জৈব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ, রাসায়নিক পদার্থের শোধন, ধোঁয়ার পরিস্রুতিকরণ, বসতি ও শিল্পাঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব রক্ষা করা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পানি দূষণ রোধের জন্য রাসায়নিক পদার্থ ও ময়লা বিশোধন দরকার। শব্দ দূষণ রোধ করার জন্য শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাপক বনায়ন পরিবেশ দূষণ রোধের সহায়ক তাই বনায়ন ধ্বংস রোধ করে বনায়ন বাড়াতে হবে। পরিবেশ দূষণ থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য বিশ্ব জুড়ে সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশে দূষণ নিরোধক আইন চালু হয়েছে। প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনও চালু করে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।


বিশ্বে মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থেই পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত থাকা দরকার। অনগ্রসর দেশসমূহে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে পরিবেশ দূষণ যেমন বাড়ছে তেমনি তার প্রতিরোধের উদ্যোগও ব্যাহত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে ওপর যে চাপ পড়ছে তা সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে এই সমস্যা প্রকট হচ্ছে। আমাদের দেশের মত অশিক্ষিত ও দারিদ্র্যের মধ্যে নিপতিত মানুষের ভবিষ্যৎ ক্রমান্বয়েই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে যাতে তাদের মধ্যে সচেতনতা আসে। দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা আবশ্যক। দেশবাসী যদি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা স্মরণ রেখে নিজেদের স্বার্থে পরিবেশ সুন্দর রাখার চেষ্টা করে তাহলে দেশের সাথে সাথে পৃথিবীরও যথার্থ কল্যাণ হবে।


বায়ু বা পরিবেশ দূষণ রোধে আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে যাবে তখন সুস্থভাবে মানবজাতির বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিবেশ রক্ষা ও জীবজন্তু সংরক্ষণ করা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। আমি-আপনি বা আমরা অনেকেই আবর্জনা বা বর্জ্য রাস্তায় যেখানে-সেখানে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছি, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বনাঞ্চল ধ্বংস করি কখনো ভাবিনা আমরা আমাদের কতটা ক্ষতি করছি; একটু সচেতনতার ও বিবেচনারবোধের অভাবে পরিবেশটাকে ক্ষতি করছি মারাত্মকভাবে। মানব জাতি মানে আমরা পরিবেশের অংশ হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে পরিবেশের সুফল ভোগ করে বেঁচে থাকি, তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে আমাদেরকেই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।






No comments:

Post a Comment