google-site-verification: google3e58058dabcd012d.html পয়ন্তপ : পারিবারিক বন্ধন ভারতবর্ষের ঐতিহ্য

পারিবারিক বন্ধন ভারতবর্ষের ঐতিহ্য



পারিবারিক বন্ধন ভারতবর্ষের ঐতিহ্য



পারিবারিক বন্ধন ভারতবর্ষের ঐতিহ্য
সাধারণত পরিবার বলতে আমরা বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন নর ও একজন নারীর যৌথভাবে বসবাস করার একটি সংগঠনকে বুঝে থাকি। অন্যভাবেও বলা যায়, পরিবার হল এমন একটি সামাজিক সংগঠন যার দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী লোক যুক্তিযুক্তভাবে একতাবদ্ধ হয়ে সন্তান প্রসবের সুযোগ লাভ করে এবং রক্তের সম্পর্কের মাধ্যমে পরস্পর পরস্পরের সাথে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে। আবার বলা যায়, পরিবার যৌথ সম্পর্ক দ্বারা গঠিত এমন একটি নির্দিষ্ট জুটি যা সন্তান প্রসবের এবং প্রতিপালনের পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করে। পরিবার হচ্ছে সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। এটি সমাজের সবচেয়ে আদিম প্রতিষ্ঠান। জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার তাগিদে গড়ে উঠেছে পরিবার।
সমাজজীবনে পরিবারের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক এবং বহুমুখী। পরিবার সমাজ কাঠামোর মৌল অঙ্গ সংগঠন। এই অঙ্গ সংগঠনই ভারতবর্ষের ঐতিহ্য। আজকের উন্নত বিশ্বে পরিবারের মূল্য ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ভারতবর্ষ হচ্ছে ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই তিন দেশ একসময় এক দেশ ছিল। তখন ভারতবর্ষ ছিল। কালের বিবর্তনে আজ এক দেশ থেকে তিন দেশে পরিণত হয়। আলাদা ভূখণ্ডে ভারতবর্ষের মানুষ বাস করলেও একসময়ের কিছু ঐতিহ্য এখনো তিন দেশ অর্থাৎ ভারতবর্ষে (ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) বিদ্যমান আছে। কিছুটা ক্ষুন্ন হতে পারে। কিন্তু ঐতিহ্য বজায় থাকবে পৃথিবী ধ্বংসের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। অনেক কিছু বলা হল ঐতিহ্যটাই বলা হল না। ভারতবর্ষের ঐতিহ্য হলো পারিবারিক বন্ধন। ভারতবর্ষের সুদৃঢ় এবং সুসম্পর্কের পরিবারের মতো এমন পরিবার বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। দাদা-দাদি বাবা-চাচা মা-চাচী ভাই-বোন সবাই একসাথে থাকার আনন্দ, মধুর সম্পর্ক এবং অনেক মানুষের ভিড়ে কিছুটা তিক্ততা উপভোগ করা সম্ভব হয় না, বিশ্বের অন্য কোন দেশে। তিক্ততা বলছি এ জন্য, একটি পরিবারে যখন অনেকগুলো মানুষ থাকে বা অনেকগুলো ছোট-বড় ছেলেমেয়ে একসাথে বড় হয়, এবং বড় হওয়ার পরও একসাথে থাকে, তখন মাঝে মাধ্যে খুনসুটি হতে পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার পরিবারের লোক সংখ্যা বেশি হলে অনেক ভালোর মধ্যে সামান্য কিছু খারাপ তো থাকেই। যেমন বাজার থেকে যত ভালো কিংবা দামী জিনিস কিনে আনা হোক না কেন ভালোর মধ্যে সামান্য খারাপ থাকে, এটাই বাস্তব। সামান্য তিক্ততাটুকু বাদ দিলে বাকি সবটাই মধুর। তিক্ততা পরিবারের বন্ধন আরো মজবুত করে।
পরিবার শব্দটাই যেন কেমন আকর্ষণীয়
পরিবার শব্দটাই যেন কেমন আকর্ষণীয়। একটা জায়গায় অবস্থান করে, তার চারদিকে টানতে থাকে সম্পর্কগুলোকে। যার আকর্ষণের সবাই ছুটে আসে পরিবারে দাদি-চাচি-মা'র কাছে। সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলা না হোক, দু'বেলা সকালে ও রাতে পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাওয়া। একে অপরের সংসারের কিংবা পরিবারের সদস্যদের ভালো-মন্দ আলোচনা করে বা মনের ভাব প্রকাশ করে থকে, একসাথে খেতে বসে। শুধু খাওয়া হয় তা কিন্তু না। পরিবারের সবাই একসাথে খাওয়ার মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে পরিবারের একের প্রতি অপরের শ্রদ্ধা সম্মান ভালোবাসা আদর স্নেহ। এই জন্যই ভারতবর্ষের পরিবার এত মজবুত। উন্নত বিশ্বের উন্নত আধুনিকতার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ভারতবর্ষের পরিবার অনেক মজবুত।
সন্তানের অপেক্ষায় না খেয়ে বসে থাকে শুধুমাত্র ভারতবর্ষের মা
ভারতবর্ষের মানুষ পরিবার ছাড়া একা থাকার কথা ভাবতেই পারে না। সন্তানের বয়স ১৮ বছর হলে, সন্তানদের একা ছেড়ে দেয়ার কথা কল্পনাও করে না। ভারতবর্ষের মানুষ সন্তান জন্ম দেয়ার পর থেকে সন্তান বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত পরিবারের আশ্রয়ের ছায়ায় থাকে। সন্তান ধীরে ধীরে বড় হবে, সন্তান নিজের হাতে মানুষ করে, সন্তান প্রতিষ্ঠিত হলে তারপর পরিবারের কর্তা-কর্তীরা তাদের সন্তানদের বিয়ে দেয়। সন্তানের বিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা বেশ আনন্দের। ছেলের জন্য মেয়ে খোজা কিংবা মেয়ের জন্য ছেলে খোজা। একটার পর একটা ছেলে/মেয়ে (পাত্র/পাত্রী) দেখা। দেখার পর বাড়িতে আসে পাত্র/পাত্রীর আলোচনা সমালোচনা করা। যার বিয়ে তাকে খ্যাপানো। এসবই একটা পরিবারের বিনোদন, যা কেবলমাত্র ভারতবর্ষের পারিবারেই আছে। পারিবারিক বিনোদন যারা কোনদিন ভোগ করেনি বা কখনো দেখেনি, তারা পৃথিবীতে সত্যি বড় অভাগা। ঐতিহ্যগতভাবে পারিবারিক বন্ধনে অভ্যস্ত না থাকায়, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ পারিবারিক মধুর সম্পর্ক কখনো অনুভব করতে পারে না। সন্তান যত বড়ই হোক না কেন, সন্তানের অপেক্ষায় না খেয়ে বসে থাকে শুধুমাত্র ভারতবর্ষের মা। বাইরের কাজকর্ম সেরে সন্তান মায়ের কাছে ফিরে আসবে, সন্তানকে খাওয়াবে, তারপর মা'র স্বস্তি, মা খাবে। এ নজির মিলে শুধুই ভারতবর্ষে। বিশ্বের আর কোথাও তেমন নজির পাওয়া যায় না। সন্তানকে বিয়ে দেওয়ার পরও সন্তানকে কোলে ওপর রেখে মাথায় হাত বুলানো, সন্তানকে খাইয়ে দেওয়া, সন্তান বাড়ি ফিরতে দেড়ী হচ্ছে দেখে অস্থির হওয়া, এসব কেবলই ভারতবর্ষের পরিবারে হয়ে ঐতিহ্য। ভারতবর্ষের মা-বাবারা সন্তানের জন্য নিজের প্রাণটাও দিতে পারে। প্রমাণের অভাব নেই ভারতবর্ষে।
মায়া-মমতা হালকা হতে থাকে
পৃথিবীর সব বাবা-মা-ই তার সন্তানের জন্য করে, এটাই স্বাভাবিক। তবুও ভারতবর্ষের তুলনা শুধুই ভারতবর্ষ। বিশ্বের অনেক দেশ আছে সন্তানের বয়স ১৮ হলে দায়িত্ব ছেড়ে দেয় মা-বাবা। এটা উন্নত দেশের কালচার। এতে করে পিতামাতার আর সন্তানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে মায়া-মমতা হালকা হতে থাকে। তখনই বাবা-মা আর সন্তানের মমতার বন্ধন মজবুত হওয়ার কথা। একই পরিবারে না থাকার কারণে বাবা-মা'র সন্তানের প্রতি, সন্তানের বাবা-মা'র প্রতি ভেতরের যে আবেগে দূরত্বের কারণে মরিচা পড়ে যায়। আস্তে আস্তে সন্তান আর বাবা-মা'র পারিবারিক বন্ধনে পুরোটাই ঝংকার ধরে যায়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বাবা-মা সন্তানের বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্র/পাত্রী খুঁজা বা দেখা, সন্তানের বিয়ে দেয়ার অনুভূতি ঐসব দেশের মানুষ কখনো অনুভব করতে পারেনি। সন্তান আঁচলের নিচে রেখে বড় করা, সন্তানের জন্য নিজের (মা-বাবার) সবটা উজার করে দেয়া। এসবের উৎপত্তি হয় মানুষের মনের গভীরের গভীরতায়। একেবলই দেখা যায় ভাতরবর্ষের পরিবারে। এই গভীরতা বলা যায়, অন্যকে বোঝানো যায় না, প্রকাশ করা যায় যায় না। পরিবারের বন্ধন শুধু অনুভব করার আর এই অনুভব করতে পারে শুধু ভারতবর্ষের মানুষ। উন্নত বিশ্বের উন্নত দেশের কালচারে যে বয়সে সন্তানদের ছেড়ে দেয়, সেই বয়সের সন্তানদের বুক দিয়ে আগলে রাখার কালচার হচ্ছে ভারতবর্ষে। একই বিশ্বের মানুষ কালচারে কত পার্থক্য।
পারিবারিক বন্ধন টিকে থাকে গভীরতায় শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়
পরিবারই সন্তানদের শিক্ষা দেয়, পরিবারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। ছোট থেকেই পরিবারের গুরুত্ব শিক্ষা পেয়ে শিশু বড় হয়ে ওঠে। যখন তখন ছোট খাটো ব্যাপারে পরিবার ভাঙ্গা বা বিচ্ছিন্ন হওয়া ভারতবর্ষে খুব একটা নেই। ব্যতিক্রম আছে। ইচ্ছে হলো বিয়ে করল, ইচ্ছে হলো ভেঙ্গে ফেলল। এখন ভালো লাগছে বিয়ে করে ফেললো, আর ভালো লাগছে না বিয়ের বন্ধন ছিঁড়ে ফেলল। এসব কালচার বা রীতি ভারতবর্ষের পারিবারিক ইতিহাসে নেই। ভবিষ্যতেও ভারতবর্ষের পারিবারিক বন্ধন মজবুত থাকবে ইনশাআল্লাহ। যেসব দেশের মা-বাবা সন্তানের বিয়ে দেয়ার পরেও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়। মায়ের আঁচল দিয়ে সন্তানের ঝুটা মুখ মুছে দেয়। সেসব দেশের পারিবারিক কালচারের বন্ধন এত সহজে ভেঙ্গে পড়ার নয়। পারিবারিক বন্ধন ভারতবর্ষের ঐতিহ্য। এ বন্ধন যুগ যুগ ধরে টিকে আছে অর্থের জন্য নয়, পরিবারের পারিবারিক গভীরতায় শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়।
পরিবার শিক্ষা দেয় ভ্রাতৃত্ববোধের, ত্যাগের, সহমর্মিতার
পরিবার শিক্ষা দেয় ভ্রাতৃত্ববোধের। পরিবার শিক্ষা দেয় ত্যাগের। পরিবার শিক্ষা দেয় সহমর্মিতার। পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুর মানসিকতা আর পরিবারের বাইরে বেড়ে ওঠা শিশুর মানসিকতা এক হয় না। শিশুরা বড় হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাদের মানসিকতা তফাৎ অনেক বেশি। আধুনিক উন্নত দেশগুলোর শিশুরা তাদের দাদা-দাদি বাবা-মা চাচা-চাচীদের নিয়ে একসাথে থাকা, তারা কখনো দেখে না। ওইসব দেশের অধিকাংশ পরিবারই বিচ্ছিন্ন। বাবা মাকে ছেড়ে চলে যায়, মা বাবাকে ফেলে চলে যায়। এই তো তাদের জীবন। তারা জন্ম থেকেই ঐ কালচারে অভ্যস্ত। ধারাবাহিকভাবে শিশু উত্তরসূরীরাও একই মানসিকতায় তৈরি হয়। শিশুরা বাবা-মা’কে দেখে যে কালচারে অভ্যস্ত হয়ে বড় হয়, ঐ শিশুরা বড় হয়ে একই কালচারে অন্তর্ভুক্ত হয়। তারা ঐ জীবনে অভ্যস্ত তাই তারা স্থায়ী পরিবারের স্বাদ তাদের কাছে ভালো লাগবে না। পরের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা তাদের থাকে না। কারণ মা বড় হয় মা ছাড়া, বাবা বড় হয় বাবা ছাড়া, বাবা পায় না মায়ের আদর, মা পায় না বাবার স্নেহ। ঐ হলো উন্নত দেশের উন্নত কালচার। তাই ভারতবর্ষের পরিবার বিশ্বের আদর্শ পরিবার। বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের মানুষের অর্থে পিছিয়ে থাকলেও, পারিবারিক বন্ধনে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত। ভারতবর্ষের সন্তানেরা অর্থের জন্য শ্রম বিক্রি করে উন্নত দেশগুলোতে। এত অর্থের প্রাচুর্য হাতে পেয়েও, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসে। নীড়ের টানে! উন্নত বিশ্বের উন্নতদেশের মানুষদের দাওয়াত করছি। আসুন আমাদের ভারতবর্ষে। উপভোগ করে যান আমাদের কালচারকে। দেখে যান ভারতবর্ষের সন্তান থাকে বাবা মায়ের কোলে, বাবা-মা থাকে এক পরিবারে। পরিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে ভারতবর্ষকে ঘৃণা করে।






















No comments:

এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না

এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না বিবেক সম্পন্ন মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য মোটা মোটা পুস্তক আর বড় বড় অট্টালিক...