google-site-verification: google3e58058dabcd012d.html পয়ন্তপ : হালিমা বেগম নারী সমাজের পরিবর্তনের এক অনন্য প্রমাণ

হালিমা বেগম নারী সমাজের পরিবর্তনের এক অনন্য প্রমাণ



হালিমা বেগম নারী সমাজের পরিবর্তনের এক অনন্য প্রমাণ




হালিমা বেগম নারী সমাজের পরিবর্তনের এক অনন্য প্রমাণ
 ঘর সংসারের মধ্যে আবব্ধ থেকে নারী বহির্জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপেনর ধারণাটি এখন পরির্বতন হয়ে গেছে। বিশেষ সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে নারীর পদচারণা এখন আর চিহ্নিত নয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী তার  কল্যাণকর ভূমিকা পালন করছে। নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছে সর্বক্ষেত্রে, সহায়তা করছে পরিবারকে। শুধু শিক্ষিত বর্তমান যুগের নারীরাই যে তা করছে তা কিন্তু নয়। ৪৫ বছর বয়সে সংসারের আর্থিক সহায়তা দানের জন্যে ঢাকার রামপুরাস্থ মৌ-বন (বৌ) বাজারে ডিম বিক্রি করছে হালিমা বেগম। বয়ছ ৪৫ হলেও দেখলে মনে হয় ৫৫ বছরেরও বেশীনিজের জন্মস্থান কোথায় বলতে পারেনা। গ্রামের নাম তো দূরের কথা কোন থানা তাও জানেনা। শুধু জানে হালিমা বিক্রমপুরের মেয়ে, ব্যাস!
এই টুকুই। কবে কখন কিভাবে ঢাকায় এসেছে কিছুই জানেনাবুঝ হওয়ার পর বাবা-মাকে কখনো গ্রামে যেতে দেখেনি। হালিমা বেগম বলে হয়তো গ্রামে তাদের জায়গা-জমি ছিল না, তাই বাবা-মাকে কখনো বিক্রমপুরের কথা বলতে শুনেনি

দিন যায় রাত পোহায় এইতো জীবন

হালিমার বয়স যখন ১০ বছর তখন কুমিল্লার দাউদকান্দির কেশবপুর গ্রামের ছেলে মোঃ আউয়াল ব্যাপারীর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বামীর বয়স ছিল ১৮/১৯ বছর, স্বামী ছিল বেবীটেক্সী ড্রাইভার। মোটামুটি চলছিল তাদের সংসার। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে এক ছেলে সন্তানের মা হলো হালিমা বেগম। সন্তান হওয়ার পর সংসারের খরচ বেড়ে যায়। দ্বিতীয় সন্তান আবারও ছেলে হলোপর পর তিন ছেলে হলো এবার মেয়ের  পালা, হলোও তিন মেয়ে। ৬ ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার বড় হলো, আয়ের চেয়ে খরচ বেড়ে গেল সংসারের অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী হলো দিন যায় রাত পোহায় এভাবেই জীবন চলতে থাকলো।



সংসারে অভাব থাকার কারণে সন্তাদের স্কুলে পাঠাতে পারনি। এমনি করেই বছরের বছর পার হয়ে গেল। এক সময় ছেলেরা বড় হলো, বড় দুই ছেলে ভ্যান চালিয়ে সামান্য আয়ও করতে শুরু করলঅভাব কিছু দিন দূরেই ছিল, কিছুটা সচ্ছলতার স্পর্শে কাটতে লাগলো হালিমা বেগমের দিন। এবার বড় দুই ছেলের বিয়ে দেয়, বিয়ের কিছু দিন পর বড় ছেলে আলাদা হয়ে যায় আর  মেজ ছেলে বউ নিয়ে বাবা-মার সাথে থাকে। হালিমা বেগমের স্বপ্ন ছিল ছেলেরা রোজগার করলে সংসারের অভাব দূর হয়ে যাবে, অভাবের কষ্ট এক দিন শেষ হবে কিন্তু সেই দিনটি আর এল না অভাব বেড়েই চলল।   

আমিওতো কিছু একটা করতে পারি

স্বামী হার্টের রোগী। স্বামী যা আয় করে তা স্বামীর ঔষধ কিনতেই লেগে যায়। ধার-দেনা করে বড় মেয়ে বিয়ে দেয় কিন্তু মেয়ের কপালেও সুখ সইলো না। মেয়ের জামাইর একের পর এক দাবী মিটাতে  অক্ষম হলে মেয়ে ফেলে জামাই চলে যায়। সংসারের অভাব প্রকট আকার ধাবণ করে। সংসারের অভাব যেমনি বাড়ছে তেমনি বাড়ছে খাবার মুখ। বড় ছেলের ঘরে দুই নাতি-নাতনি মেজ ছেলের ঘরে এক নাতনি। একদিকে অভাব অন্যদিকে ধার-দেনা নিরুপায় হয়ে হালিমা বেগম মনে মনে চিন্তা করে অনেক মহিলারাইতো ব্যবসাপাতি করছে, আমিওতো কিছু একটা করতে পারি। অনেক কষ্ট করে স্বামী ছেলের সহযোগিতায় ১০০০ টাকা নিয়ে ডিমের ব্যবসা শুরু করি১০০ ডিম বিক্রি করতে পারলে ২০ টাকা লাভ থাকে, প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ ডিম বিক্রি হয়ে থাকে ইতোমধ্যে হালিমা বেগম ব্যবসার বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে।  একই দামে ডিম কিনে ছোট বড় দুই ভাগ করে, বড়গুলো বেশি দামে বিক্রি করে এতে লাভের অঙ্ক বেড়ে যায়। বর্তমানে হালিমা বেগমের ৮-১০ হাজার টাকা পুঁজি আছে। হালিমা বেগম যে জায়গায় বসে সেই জায়গার মাসিক চাঁদা দিতে হয় ৬ টাকা বাজার কমিটিকে। অন্য কোন খরচ নেই বলে যা লাভ হয় তা-ই লাভ বলে হালিমা বেগম।  
হালিমা বেগম আরো বলে এই বয়সে সংসারের বোঝা না হয়ে সাহায্য করতে পারছি, সংসারের অভাব কিছুটা হলেও দূর করতে পারছি, স্বামী-সন্তান, নাতি-নাতনিদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি তাই আমার সুখ। এই অতৃপ্ত সুখের পর হালিমা বেগম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে সুখ আর পেলাম কই! একটা ঘরে ছেলে, ছেলের বউ, নাতনি আর তিন মেয়ে নিয়ে থাকতে হয়। ঘর ভাড়া ১৫০০ টাকা, বর্তমানে ১৫০০ টাকার ঘর আর কত বড় তার ওপর ছেলে-ছেলের বউ। আজ যদি হালিমা বেগমের দুইটি সন্তান থাকতো, সংসার যদি ছোট থাকতো তাহলে  এত কষ্ট জীবনে পোহাতে  হতো না বলেই এই বয়সে আপসোস করে এই কথাগুলো আনমনে বলে ফেলে।   



এই বয়সে হালিমা বেগম এটাই প্রমাণ করলো নারী সমাজ আজ কতটা পরিবর্তন হয়েছে। এমন এক সময় ছিল যখন নারীরা শুধুই সংসারের দ্বায়িত্ব পালন করতো আর পুরুষরা উপার্জনের জন্য বাইরের কর্মক্ষেত্রের দ্বায়িত্বে। এখন নারী বাইরের জগতে ছড়িয়ে পড়ছে , আবার সাংসারিক দায়-দ্বায়িত্বও পালন করছে, করছে সন্তান লালন পালন।  সংসারের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য নারীর ভুমিকার গুরুত্ব সম্পর্কে  দ্বিমতের অবকাশ নেই। নারীরা আজ সংসার জীবনে নারী পুরুষের দায়-দ্বায়িত্বের ভাগাভাগি না করে যৌথভাবে গড়ে তুলছে শান্তি সুখের নীড়।  






















      No comments:

      এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না

      এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না বিবেক সম্পন্ন মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য মোটা মোটা পুস্তক আর বড় বড় অট্টালিক...