google-site-verification: google3e58058dabcd012d.html পয়ন্তপ : তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা

তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা

তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা

তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা






একটি পোর্টফলিও প্রদর্শন করা হয়েছে মার্ক করে। বিনিয়োগকারীর পোর্টফলিওতে PLFSL এবং Familytex এর অবস্থা কষ্ট করে দেখে নিন। এই বিনিয়োগকারী যদি এজিএমে কিংবা এজিএমের পরে কোম্পানির অফিসে যায় তাকে নতুন শেয়ারহোল্ডারের খাতায় নাম লিখতে হবে। কেননা, এই শেয়ারহোল্ডারের মুখ পরিচিতি বা ফেসভ্যালু নেই এজিএম করা শেয়ারহোল্ডারদের তালিকায়। এই Familytex ৬০ টাকার ওপরে অনেকের কিনা আছে PLFSL মত। ধসের সময়কার ব্যাংকিং সেক্টরের বিনিয়োগকারীদের অবস্থা তো আরো করুণ। শুধু PLFSL কিংবা Familytex নয়, প্রায় ৯০% কোমপানির এমন অসংখ্য শেয়ারহোল্ডার নীরবে-নিভৃতে শেষ হয়ে যাচ্ছে না খেয়ে না খেয়ে। এসব শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে ভাবার কেউ নাই, এদের কথা শোনার কেউ নেই। এই সব বিনিয়োগকারীদের কথা তো কেউ শুনে না তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা।

আমরা যখন একটু বাঁচার তাগিদে আজ প্রায় এক যুগ ধরে (২০০৯ থেকে ২০১৯) শেয়ার বাজার নামক অথৈ লোনা জলের মহাসাগরের অতল গহ্বরে হাতড়ে বেড়াচ্ছি শুধুমাত্র তীরে উঠার আশায়। ২০০৯ সালের শেষের দিকে আমাদের ফেলে দেওয়া হয় লবণাক্ত শেয়ার বাজার মহাসাগরের। এই দশ বছরে নিঃস্ব হওয়া কোন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার মার্কেটের লিষ্টেট কোম্পানির পর্ষদ-সভার সদস্যগণ বা পরিচালকগণ খবর রাখেন না, তাঁদের সামনের পরা গোটা কয়েক জন শেয়ারহোল্ডার ছাড়া। এই কয়েকজনকে নিয়ে এজিএম করেন এবং পাস করান আর শুধু তাদের জীবন কাহিনী উপলব্ধি করেন।

২০০৮-২০০৯ সালে যারা ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিল নির্ভরযোগ্য কিংবা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির বলে। সেই নির্ভর ফান্ডামেন্টাল সেক্টরটিই বিনিয়োগকারীদের জীবন কোমায় পরিণত করে দিয়েছে; তাদের জ্ঞান কখনো বা কোন দিন ফিরবে কিনা তাদের পরিজনরা জানে না। তাদের পরিবার পরিজনরা সোমালিয়ানদের মত বেঁচে আছে তাদের কোমায় থাকা রোগী যদি কখনো কোনদিন ঠোট কেঁপে একটু সাড়া দেয় সেই আশায়।

সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৩তম এজিএম দেখে ভাবলাম ভিতরটা হাল্কা করা একটা জায়গা অন্তত পাওয়া গেল, সেই থেকে অপেক্ষায় ছিলাম পরবর্তী এজিএমের জন্য। অপেক্ষার শেষ দিনটি ছিল ২৩-০৬-২০১৯ তারিখ সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৪তম। অপেক্ষার প্রহর শেষে দুর্বল শরীরে এজিএমে উপস্থিত হলাম শুধুমাত্র তিক্ত লবণাক্ত মহাসাগরে আমরা যারা হাতড়ে বেড়াচ্ছি তাদের হয়ে দু’একটা কথা বলার জন্য কিন্তু নিয়তি এখানেও বঞ্চিত করলো। এতে শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব আপনার কোন দোষ নেই কেননা নিঃস্ব হওয়া বিনিয়োগকারীদের নিয়তিই প্রবঞ্চনা করে সব জায়গায় সব ক্ষেত্রে। তা-না হলে মাত্র তিনজন উপস্থিত মহিলা শেয়ার হোল্ডারের মধ্যে থেকে কিছু বলার উদ্দেশে সম্ভবত দু’জনের নাম জমা পরে। দু’জন মহিলার মধ্যে একজনকে শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব খুব ভাল করে চিনেন বাকি রইলো মাত্র একটি মহিলার নাম। যে মহিলাটি একটা বছর অপেক্ষা করে আছে এই দিনটির (সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৪তম) জন্য। অবশ্য কোনো শেয়ারহোল্ডার(সাউথইস্ট ব্যাংকের) এজিএমে জন্য অপেক্ষা করে ছিল তা আপনার কথা না।

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব আপনি যখন এজিএমের শেষের দিকে তিনজন পুরুষের নাম উল্লেখ করে তাদের শেষ বক্তা ঘোষণা দিলেন তখন মনে হলো বিশাল আকারের দুই পাথরের মাঝখানে রেখে উপরে হাতুড়ি দিয়ে পিটালেন অর্ডার অর্ডার বলে। প্রায় একযুগে ধরে ধীরে ধীরে নিঃস্ব হওয়া দুঃস্থ নিংড়ানো অনুভূতিটাকে এমন ভাবে থেঁতলে দিলেন আর কখনো অনুভূতি অনুভব করতে পাবে না। এক নিমিষে ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে চুরমার করে দিলেন, এজিএম শেষ করার ধৈর্য ও শক্তি হারিয়ে বাধ্যই হয়ে বেরিয়ে আসি।এ বের হওয়ার কষ্টটা যে কত যন্ত্রণাদায়ক ছিল তা শেয়ার বাজারের সোমালিয়ান বিনিয়োগকারী ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব আমরা তো শুধু শেয়ার মার্কেটের দাবা খেলার চালের সৈন্য গুটি। রাজা চেক দিতে সামনে আগানোর জন্য প্রথম সৈন্য গুটিগুলোকে কাটা হয়।

তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব আমার এ লেখা আপনার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে আপনাকে কিংবা আপনাদেরকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়। শুধু একবার ছোট করে ভেবে দেখুন না আপনি বলেছেন আপনার ৩৩হাজার শেয়ারহোল্ডার তার মধ্যে আপনি ৩৩ জনের খবর রাখেন বাকি ৩২,৯৬৭ জনের কথা কখনো মনে করেছেন। ৩৩,০০০ শেয়ারহোল্ডারের নাম ধরে চেনা কারো পক্ষেই কিছুতেই কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু ‘শেয়ারহোল্ডার ডে’ দিনটিতে অপরিচিত শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে এক’দুই জনকে এক নজর দেখতে পারেন একটু কথা বলার সুযোগ দিয়ে।

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব অপরিচিত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কি অবস্থা, কিভাবে কাটে তাদের জীবন কখনো ছোট্ট করে ভেবেছেন। যাদের চিনেন তাদের আপাদমস্তক চিনেন। তারা দিনে ক’বেলা খাইলো, ভাত খাইলো না রুটি খাইলো, কি দিয়ে খাইলো, কি পোশাক পরলো পোশাক কত টাকায় কোথা থেকে কিনল সব জানেন শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব, জানেন না শুধু তাদের কথা যাদের ঘরে মাঝে মধ্যেই এবং যেসব দিনগুলোতে দেশে আনন্দ উৎসবের বিশাল সমারোহ চলে ঐসব দিনগুলোতে শেয়ারবাজারের ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ সালের বহাল থাকা বিনিয়োগকারীদের অনেকের ঘরে চুলা জ্বালানোর জন্য ম্যাচের কাঠির প্রয়োজন হয় না।

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব যারা (শেয়ারহোল্ডারা) চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেল কত বার গেল তাদের হিসেব রাখেন কিন্তু তাদের খবর রাখেন না যারা সামান্য নাপা/প্যারাসিটামল কিনার সামর্থ্য নেই, তারা বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন পার করে কাতরাচ্ছে বছরের পর বছর।

তাদের মধ্য থেকে একজন মহিলা শেয়ারহোল্ডার আপনার ২৪তম এজিএমে শুধু দু'টো কথা বলার জন্য উপস্থিত হয়েছিল, তাকে একটু মূল্য দিতে পারতেন। আপনি যদি মূল্য দিতেন তাহলে অপরিচিত একজন মহিলার নাম আপনার চোখে পড়ার পর তাকে অন্তত এক মিনিট সময় দিয়ে শেয়ারহোল্ডারের স্বীকৃতি দিতেন।

একজন অসহায় শেয়ারহোল্ডার তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন ৬ বছর চেষ্টা করে ২৪তম এজিএমে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। যিনি ৬ বছর ধৈর্য ধরে চেষ্টা করেছেন তাকে ধৈর্যের সম্মান করতেই হয়। প্রশ্নটা ধৈর্য নয়, প্রশ্নটা একজন শেয়ার হোল্ডারের স্বীকৃতির, শেয়ারহোল্ডার হিসেবে এজিএমে কথা বলার মৌলিক অধিকারের।

এখন তো শুধু পাস পাস এজিএম, যে কোম্পানি যত বেশি বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করছে সেই কোম্পানির এজিএম ততটাই দ্রুত পাস হচ্ছে। দু’একটা কোম্পানির এজিএমে একটু আলোচনা হয় সেখানেও বাক স্বাধীনতা সীমিত, মূল্য পায় ফেসভ্যালু। সাধারণ অপরিচিত বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও কথা বলার সুযোগ পায় না, তাদের ফেলা হয় নতুন শেয়ারহোল্ডারদের লিস্টের খাতায়। তাদের কথা কেউ শুনে না তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা।

তাঁরা শুনে শুধুই তাদের কথা


শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব আপনি দেখে দেখে এবং ডেকে ডেকে যাদের বক্তিতা দিতে বললেন তাদের অনেকের গতানুগতিক রসালো বক্তিতা তো অহরহই শুনে আসছেন কিছুটা ব্যতিক্রম তো করতে পারতেন।এই এজিএম করা বিনিয়োগকারীদের অনেকের মুখে শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেবের কথা শুনেছি, আপনি অনেকটা ব্যতিক্রম শেয়ারহোল্ডারদের কাছ।তাই এক বছর অপেক্ষা করে আপনার ব্যাংকের ২৪তম এজিএমে উপস্থিত হয়েছিলাম অনেকটা আশা নিয়ে, তবে চাওয়া বেশি কিছু ছিল না ছোট ছোট দু’একটা কথা বলা ছাড়া। ভাগ্য এখানেও বিমাতাসুলভ আচরণ করল।

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব আপনাকে পরামর্শ দেয়ার দৃঢ়তা আমার নেই কিন্তু আমার/আমাদের (নিঃস্ব হওয়া বিনিয়োগকারীদের) ‘শেয়ারহোল্ডার ডে’তে একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে দু’টো কথা অধিকারের তো আছে। অপরিচিত শেয়ারহোল্ডারদের দু’একটা কথা শুনতে আপনার/আপনাদের কেন এত অনীহা। দুই-তিন ঘণ্টা সময় ধরে করা এজিএমগুলোতে ৫মিনিট সময় দু’একজন অচেনা-অজানা শেয়ারহোল্ডারদের তো দিতেই পারেন তারা তো আপনার/আপনাদের কোম্পানির এজিএমে দু'চারটা কথা বলার অধিকার রাখে। যেহেতু তারাও আপনার/আপনাদের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেব শুধু নিঃস্ব বিনিয়োগকারীরাই কি মার্কেট ধসের ফল ভোগ করে যাবে!

শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেবগণ গতানুগতিক যে কথা বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছেন তার বাইরেও তো দু-একটা অপরিচিত মুখ থেকে অপরিচিত কথা বেরিয়ে আসতে পারে। অপরিচিত কথাগুলো মধ্য থেকে কোন একটা কথা মূল্যবান হতেও-তো পারে। শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান সাহেবগণ আমাদের দেশে একটা প্রবাদ বাক্য আছে “গোবরেও পদ্ম ফুল ফোটে” জ্বলন্ত উদাহরণ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ জনাব ড. আতিউর রহমান। আমি অর্থনীতিবিদ জনাব ড. আতিউর রহমান ওনার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করেছি।

সংসার জীবনের বাস্তব চাহিদা পূরণের জন্য কর্মহীন দেশে কিছু একটা করে জীবন-যাপন করতে এই অভিশপ্ত পথে (বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে) জীবিকা নির্বাহ করতে এসে প্রায় এক যুগ ধরে ক্যাপিটাল মার্কেটে নামক বিষাক্ত সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, অনেকেই তলিয়ে গেছে, বাঁচার লড়াইয়ে হেরে কয়েক জনের নিথর দেহ সাগরে ভেসে ওঠে। বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের লিষ্টেট কোম্পানির পরিচালকগণের হৃদয়ের অনুভূতিতে অনুভবে এতোটুকু মানবতার পরাগ-রেণু ছড়ায় না হাতে-গুণা কয়েক জনের জন্য ছাড়া।

২০০৯ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে একেকটা ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য কত ছিল আর মার্কেটে ভূমিকম্প নামক ধসের পর ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থান কোথায় নেমে এলো; কিভাবে এক ভূমিকম্পে শেয়ার মার্কেট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেল। এই ভূমিকম্পে কত মানুষের জীবন আজও ধ্বংস স্তূপে চাপা পড়ে আছে। প্রায় এক যুগ হতে চলল এদেরকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করার কোনো রকম প্রয়াস কারোর নেই কোথাও নেই আছে শুধু অপপ্রয়াস দ্বারা ধ্বংস স্তূপের ওপর আরো খোয়া ফেলে স্তূপ ভারি করে চাপার ভার আরও ভারি করে তুলা।

‘সম্মানিত শেয়ারহোল্ডার’ কিংবা ‘শেয়ারহোল্ডার ডে’ বলতে কি গোটা কয়েক পরিচিত মুখ। যাদের বাইরে আপনারা অন্যদের শেয়ারহোল্ডার ভাবতে পারেন না। নতুন মুখ কিংবা অপরিচিত শেয়ারহোল্ডারদের আপনার/আপনাদের কাছে কোন মূল্য নেই। আপনার/আপনাদের মধ্যে যখন এমন মনোভাব তখন আপনারা যাদের চিনেন আর যাদের দিয়ে পাস করান শুধুমাত্র তাদের নিয়েই মার্কেট পরিচালনা করুন বাকি সমস্ত শেয়ারহোল্ডাররা কেনাবেচা করতে পারবে না এমন নিয়ম বা রুল জারি করে তাদের ঝাঁটা দিয়ে বিদায় করে দিন মার্কেট থেকে। তাহলে সব ঝামেলা চুকে যাবে। রেকর্ড ডেটের প্রয়োজন হবে না আর নতুন শেয়ারহোল্ডারও তৈরি হবে না। আমরা যারা এজিএমে নতুন কিংবা অপরিচিত মুখ তারা বঞ্চিত কিংবা কষ্ট পাব না। আমরা তো এমনিতেই শেষ হয়ে গেছি আর তো শেষ হওয়ার ভয়ের কিছু নেই।




No comments:

এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না

এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না বিবেক সম্পন্ন মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য মোটা মোটা পুস্তক আর বড় বড় অট্টালিক...