ময়লার ঝুড়ি বলছি মানসিকতা পরিবর্তন করুন, "আমাকে ব্যবহার করুন"
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। পরিছন্নতা মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম ভাললাগা জন্ম দেয়। যে কোন জিনিস পরিষ্কার থাকলে শুধু দেখতেই সুন্দর দেখায় তা কিন্তু না মনকেও প্রফুল্ল করে তুলে। আর নোংরা থাকলে ভাল কিংবা দামী জিনিসও খারাপ দেখায়, অনেক সময় কপাল কুঁচকে যায়। নোংরার প্রতি সব মানুষের অনীহা থাকে, মানুষ মাত্রই সুন্দর এবং পরিষ্কারের পূজারী। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। রাজধানীতে এখন ডাস্টবিন যাকে বাংলায় বলে ময়লার ঝুড়ি (আমাকে ব্যবহার করুন) দেখা যায় প্রায় প্রতিটি রাস্তায়। "আমাকে ব্যবহার করুন" ছবিটি আমি গুলশান-২ এর লেকের পাড়ের এক বাড়ির সামনে থেকে তুলি।
বাকি দুইটি ছবিটি ঢাকার রামপুরা থেকে ওঠানো। রঙের কৌটা দিয়ে ডাস্টবিন তৈরি করা দেখে সত্যি আমি অবাক হই। আমার ভালো লেগেছে সুন্দর উদ্যোগের জন্য। রঙের কৌটা দিয়ে তৈরি করেছেন ডাস্টবিন এবং কৌটায় লিখে দিয়েছেন "আমাকে ব্যবহার করুন"। যিনি রঙের কৌটা দিয়ে ময়লার ঝুড়ি তৈরি করে রস্তায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন ওনার মানসিকতা কতটা পরিচ্ছন্ন ভেবে দেখুন। যিনি বাড়ির সামনে ময়লা ফেলার জন্য এত সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছে একবার ভাবুন তো তিনি বাড়ির ভিতরে কতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন। এই সুন্দর মনের মানুষের মানসিকতা দেখে আমাদের প্রত্যেকের শিক্ষা নেয়া উচিত। হাতের কাছে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও ময়লা ঝুড়িতে ফেলছে না। মানুষ "আমাকে ব্যবহার করুন" ব্যবহার করেছে না, ময়লা আবর্জনা ঝুড়ির বাইরে ফেলে পরিবেশ দূষিত করছে। কিন্তু যিনি এই সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছেন তিনি সত্যিই সুন্দর মনের পরিচ্ছন্ন মানুষ। প্রশংসার যোগ্য। আমি উনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সব বাড়ির মালিকদের উচিত বাড়ির সামনে এমন একটি ময়লার ঝুড়ি রাখা। শহর পরিষ্কার করার জন্য ঢাকার সব বাড়ির মালিকদের এরকম ভালো কাজ করা উচিত। ময়লা বাইরে না ফেলে ওই ঝুড়িতে ফেলা, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা প্রত্যেক জনগণের সামাজিক এবং নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আবর্জনা খোলা জায়গায় ফেললে শুধু দেখতেই খারাপ দেখায় তা কিন্তু না, পরিবেশ নোংরা হয়। পরিবেশ নোংরা থাকলে বাতাস দূষিত হয়। অথচ আমরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকি, সেই বাতাসই আমরা বিষাক্ত করে নিজেই নিজের ক্ষতি করছি। একটু দায়িত্ববোধ কিংবা একটু সতর্কতাই আমরা নিজেরা নিজেদের বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করতে পারি।
বিশ্বের অবাস-যোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয় স্থানে
যুক্তরাজ্যের দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার ‘ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট’ বসবাসযোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের যে তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর। অবাস-যোগ্য শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা শহর। রাজধানীতে যেমনি বাড়ছে মানুষ, তেমনি বাড়ছে মানুষের চাহিদা। আমাদের রাজধানী শহর ঢাকা ময়লা-আবর্জনার দূর্গন্ধে জনজীবন অনেকটা অস্বস্তিকর হয়ে গেছে। খাল-বিল-জলাশয়গুলো ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। আবর্জনা পঁচে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, বাতাস এবং পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন রোগ মনুষের মধ্য বাসা বাঁধছে আর মানবজীবন হয়ে ওঠছে দূর্বিসহ। সমস্যাবহুল ঢাকার সমস্যা যে দিনে দিনে বেড়েই চলছে, কমছে না। আপাতত কমবে বলেও মনে হচ্ছে না, কারণ কমানোর কোন উদ্বেগ কেউ নিচ্ছে না; না সরকার না ঢাকাবাসী। এতে করে রাজধানীতে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে পরিবেশদূষণ ও বায়ুদূষণের সাথে সাথে বিভিন্ন দূষণের সংখ্যা।
শুধু দুঃখজনকই নয়, উদ্বেগজনকও বটে
ময়লা-আবর্জনায় বড়পুর আমাদের শহর ঢাকা শহর। এটা শুধু দুঃখজনকই নয়, উদ্বেগজনকও বটে। বসবাসের অযোগ্য শহর, দূষণকবলিত শহর, যানজটের শহর, অনিরাপদ শহর ও নোংরা শহর এসবগুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ঢাকা অবাস-যোগ্য শহর। রাজধানী কপালে “অবাস-যোগ্য শহর” নামক চন্দনের টিপ পরে গেছে তা মুছে ফেলা সহজ হবে না। যদি শহরের জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটে, সুস্থ পরিবেশে সুস্থভাবে বাঁচার ইচ্ছে না জাগে। সুস্থ পরিবেশে সুস্থভাবে বাঁচতে হলে অবশ্যই নিজেদের বদঅভ্যস পরিহার করতে হবে এবং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ অনুভব করতে হবে। রাজধানীর বাতাস এখন এতটাই দূষিত যে বিষাক্ত বললেও ভুল হবে না, এই পরিবেশে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন কিছুতেই সম্ভব নয়। ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি। বিশ্বের ঘনবসতি ও জনবহুল শহর হলো ঢাকা। ঢাকার আশেপাশে ভেতরে এবং বাইরে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য ছোট বড় নানারকম শিল্প ও কল-কারখানা। ময়লা-আবর্জনা এবং এসব শিল্প ও কল-কারখানার বর্জ্য বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। দূষণকবলিত শহরের সকল প্রকার দূষণ রোধে শুধু পরিকল্পনা করা না এখন পদক্ষেপ নেয়ার সময় এবং অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ঢাকাবাসীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, এ ব্যাপারে নগরবাসীদেরও দায় রয়েছে, এ দায় ঢাকাবাসী এড়াতে পারে না। আইনের বাস্তবায়ন আর ব্যাপক জনসচেতনতাই পারে দূর্বিষহ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে।
এটা আমাদের অনৈতিকতা
এখন ঢাকা শহরের প্রায় সব রাস্তায় একটু দূরত্ব বজায় রেখে অসংখ্য ময়লার ঝুড়ি রাখা আছে "আমাকে ব্যবহার করুন"। অধিকাংশ ময়লার ঝুড়িই ফাঁকা পরে আছে অথচ ডাস্টবিনের আশেপাশে আবর্জনায় ভরা থাকে। আবর্জনা এভাবে কারা ফেলে, নিশ্চয় ভিন দেশের কেউ না, আমি ফেলি আপনি ফেলেন ঢাকাবাসী ফেলে। আমাদের দেশের মানুষের লজ্জা করে না, ময়লা ফেলার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও হাতের ময়লা অকপটে ঝুড়ির পাশে বা বাইরে ফেলি; নোংরা করি পরিবেশ। এতেই বুঝা যায় কোথায় আমাদের নৈতিক অবক্ষয়ের অবস্থান। এই মানসিকতা আমাদের পরিবর্তন করা উচিত, লজ্জিত হওয়া উচিত এই হীন কাজের জন্য।
বিশ্বের অনেক দেশ আছে রাস্তায় ময়লা পাওয়া যায় না। ঐ দেশ পরিষ্কার রাখে দেশের জনগণ। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর আর আছে ভিয়েনার নাম। সেই শহরগুলোকে স্বর্গের সঙ্গেই তুলনা করা হয়। উল্টো চিত্র রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে, তার মধ্যে একটি ঢাকা শহর। ঢাকাবাসীরা ভালোভাবেই বুঝতে পারে বাসযোগ্যতার মাপকাঠিতে নিজেদের অবস্থান আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা কেন পারি না আমাদের শহর আমাদের দেশ সুন্দর রাখতে। মেলবোর্ন কিংবা ভিয়েনার মত করে নয় আমাদের মত করে।
সরকার ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, আমরা তা ব্যবহার করি না। সুযোগ থাকা সত্বেও জনগণ সেই সুযোগ কাজে লাগাই না। সরকার কি করে শহর পরিষ্কার করবে, জনগণ পরিষ্কার না রাখলে। জনগণ ঝুড়িতে ময়লা না ফেলে বাইরে ফেলেছে, এতে সরকারের কি করার আছে। সরকার কি জনগণের হাত ময়লা থেকে নিয়ে ঝুড়িতে ফেলবে? জনগণের হাত থেকে ময়লা নিয়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে না পারলেও আইনের কঠোর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে সরকার। অনেকটা লঘু পাপে গুরুদণ্ডের মতো। সরকারও এব্যাপারে নীরব।
এমনও দেখেছি বাসা বসে ময়লা পলিথিনে ভরে ঢিল মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়। এমন জগন্য কাজ হরহামেশাই করে থাকে এই শহরের জনগণ। উঁচু কিংবা নিচু ভবন ভেদে না মানুষ ভেদে এমন হীন কাজ করে থাকে সব মহলেই। এটাই আমাদের অনৈতিকতা, এর পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী। একটা শহর তখনই সুন্দর হবে, যখন শহরবাসীদের আবেগে পরিচ্ছন্নতার উচ্ছ্বাস জাগ্রত হবে, শহরের জনগণের মন ও দৃষ্টি অপরিচ্ছন্নতায় ভিতরটা বিষিয়ে ওঠবে।
ভাবতে খারাপ লাগে, হাতের কাছে ময়লার ঝুড়ি থাকা সত্ত্বেও ময়না বাইরে ফেলছে ভেবে। আমরা সবাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি, ভালোবাসি পরিচ্ছন্নতাকে, কিন্তু নিজে পরিষ্কার করি না। আমিও করি না, আপনিও করেন না, তাহলে পরিষ্কার হবে কিভাবে। আসুন আমাদের মনের ময়লা ডাস্টবিনে ফেলে দেই। মনের ময়লা ডাস্টবিনে ফেলে দিলে হাতের ময়লাও ডাস্টবিনে ফেলা মানসিকতা হবে। সবার আগে প্রয়োজন জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন। গুলশানের ভদ্রলোকের মত দু’একজন দিয়ে শহর পরিষ্কার রাখা যাবে না, প্রত্যেককেই ওনার মত হতে হবে।
দেশের অর্থ অপচয় হয়েছে
ময়লার ঝুড়িগুলো রাস্তায় লাগাতে করতে, দেশে বিরাট অংকের টাকা খরচ করতে হয়েছে। ঝুড়ি ব্যবহার না করার কারণে শুধু পরিবেশ নোংরা হচ্ছে তা না ঝুড়িগুলো নষ্ট হচ্ছে। দেশের অর্থ অপচয় হয়েছে। ঝুড়ি ব্যবহার করলে দেশের টাকা সার্থক হত। জনগণই টাকার অপচয় করছে, ডাস্টবিন ব্যবহার না করে। এ দায়ভার দেশের জনগণের।
এটাই হবে দেশের জনগণ হিসেবে আমাদের সার্থকতা
বিশ্বের নোংরা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহর অন্যতম। শুনতে আমাদের দেশের জনগণের খারাপ লাগে তবুও জনগণ পরিষ্কার থাকে না। ঢাকা শহর কেন এত নোংরা শহর, জনগণের জন্যই ঢাকা শহর বেশি নোংরা শহর। দেশের জনগণ নোংরা করতে এবং অপরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে তাই ঢাকা শহর নোংরা। ঢাকাবাসীর মানসিকতা আবর্জনায় ঢাকা পড়ে গেছে, তা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রবল স্রোতের প্রয়োজন। জানিনা সেই স্রোতের আদৌ আসবে কিনা! যে দেশে রাস্তায় ময়লা পাওয়া যায় না, সে দেশের জনগণের মনে ময়লা নেই। তাই তাদের দেশের রাস্তার ময়লা থাকে না। আইন করে জনগণের মন পরিষ্কার করা যায় না, আইন করে জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন করা যায় না। মানুষ নিজে থেকে নিজেকে পরিবর্তন না করলে। ভালোর ভালো অনুভূতি অনুভব করতে হবে, শুধু অনুভব করলে হবে না অনুভব করে নিজেকে মানতে হবে। অন্যকে উৎসাহিত করতে হবে। আসুন আমরা আমাদের শহর পরিষ্কার রাখি। নিজের বাড়ি পরিষ্কার করার সাথে সাথে বাড়ির পাশের রাস্তা পরিষ্কার করি। আমাদের দেশ বাংলাদেশ আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখি। বিশ্বের পরিচ্ছন্ন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করি। এটাই হবে দেশের জনগণ হিসেবে আমাদের সার্থকতা।
No comments:
Post a Comment