google-site-verification: google3e58058dabcd012d.html পয়ন্তপ : সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত করি

সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত করি

সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত  করিসন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত  করি




সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত করি

নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে অন্যের লেখা কেন বই কিনবো! আবেগ জড়ানো এই প্রশ্নের উত্তর যেমনি বিস্তৃত তেমনি সুদৃঢ়। মানব সভ্যতা বিকাশের এক শ্বাসত ও চীর কল্যাণময়ের একমাত্র উপাদান হচ্ছে বই। বইয়ের প্রভাব এতটাই ব্যাপক যে, একটি ভাল বই একজন মূর্খ অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্বরকেও রূপান্তরিত করতে পারে মানবিক গুণসম্পন্ন আদর্শ মানুষে।


“রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা -
যদি তেমন বই হয়” বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে এভাবে বলেছেন জগৎ খ্যাত কবি ওমর খৈয়ম। “ভালো বই এমন এক সঙ্গী যা অমঙ্গল, অকল্যাণ ও বিরক্ত করে না। এটা এমন এক প্রতিবেশী যা আপনার ক্ষতি করে না। বইয়ের পাতাগুলো পাঠকালে আপনার অনুভূতি শক্তিশালী ও মেধা তীক্ষ্ণ হয়।” এই উক্তি করেছেন খ্যাতিমান আরবি সাহিত্যিক আল জাহিজ। আল জাহিজের উক্তিতে প্রতীয়মান হয়, বই পড়লে জীবনে কল্যাণ ছাড়া কখনো অকল্যাণ হয় না।


লেখক মুজতাহিদ ফারুকীর ‘বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই’ লেখাটির কিছু খণ্ড খণ্ড অংশ আমি এখানে তুলে ধরছি-
“বিশ্বের যে দেশ যত উন্নত, সে দেশের মানুষের বই পড়ার অভ্যাস তত বেশি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের কোনো দেশের একটি ছবি দেখেছি, যেখানে একটি ট্রেনের যাত্রীদের সবার হাতে বই দেখা যাচ্ছে। যারা দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন, তারাও ওই দাঁড়ানো অবস্থাতেই বই মেলে রেখেছেন চোখের সামনে। উন্নত দেশগুলোর মানুষেরা চলার পথের সময়টুকু বই পড়ে কাটিয়ে দেন। আমাদের মতো রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা বা অন্যের ছিদ্রান্বেষণে মেতে ওঠেন না।


বেশ কিছু দিন আগে শান্তিনিকেতনে গিয়ে দেখেছি, সেখানকার তরুণেরা আমেরিকায় সদ্য বেরোনো একজন লেখকের বইটি এসেছে কি না সেই খোঁজ নিচ্ছেন তাদের লাইব্রেরিতে। আমাদের এখানে সে রকম কোনো দৃশ্য আজো চোখে পড়েনি। ভারত যে ক্রমেই বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সামনের কাতারে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে, তার কারণ নিঃসন্দেহে এই পাঠাভ্যাসের মধ্যে নিহিত।


আমরা বলছি সেই পাঠাভ্যাসের কথা যেটি মানুষ করে মনের আনন্দে, নিজের জ্ঞানের সীমা সম্প্র্রসারণ করতে এবং জীবন ও জগৎ সম্পর্কে জানতে। বিশ্বজগতের সৃষ্টিরহস্য, বিশ্বের ইতিহাস, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের চিন্তা-ভাবনা, জীবন-দর্শন, রাজনীতি-অর্থনীতি-দর্শন জানতে হলে বই পড়তেই হবে। বই মানুষের মনের পুষ্টি যোগায়, মনকে উদার ও মানবিক করে তোলে, জীবনের শাশ্বত সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে এবং মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়, তার জীবনকে করে পরিমার্জিত।


বই না পড়ার কারণে জাতি হিসেবে আমরা ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছি। আমাদের সতর্ক হওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কারণ, লেখাপড়ায় পিছিয়ে যেতে যেতে আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি যখন আমাদের শিক্ষিত লোকেরাও ঠিকমতো নিজের ভাষা পর্যন্ত লিখতে পারছেন না। আমরা সাধারণভাবে স্নাতকোত্তর পাস করা লোকদের কথা বলছি না, বরং যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এবং লেখালেখির চর্চা করেন, তাদের কথাই বলছি।
সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত  করিসন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত  করি





সংবাদপত্রে কাজ করার সুবাদে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের লেখা নিবন্ধ দেখার সুযোগ হয়েছে, যেগুলো সতর্কতার সাথে সম্পাদনা না করলে ছাপার উপযোগী হয়ে ওঠে না। পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট অনেক লেখকের লেখা পড়ে দেখেছি, ভাব প্রকাশের কী ভয়াবহ দুর্বলতা থেকে যায় তাদের লেখায়।


বই না পড়ার কারণে এর চেয়েও বড় ক্ষতি হচ্ছে আমাদের তরুণদের। সেটি হলো তারা যুক্তি ও কুযুক্তির তফাত বুঝতে পারছে না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে কতগুলো যুক্তিহীন, একগুঁয়ে মানুষ তৈরি হচ্ছে আমাদের সমাজে। কূপমণ্ডূকতার ঘেরাটোপে বন্দী এসব লোক যখন রাষ্ট্র ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে জায়গা করে নেয় তখন সমাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়, সমাজ পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করে এবং পরিণামে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।” বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অংশগুলো আমার কাছে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে তাই আমার লেখায় এই অংশগুলো আমি তুলে ধরেছি।


বই জ্ঞানের আধার। যুগ যুগ ধরে মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে বইয়ের পাতায়। মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি নিজের বুকে নিয়ে অনাগতকালের পাঠকের জন্য অপেক্ষমাণ হয়ে আছে বই। প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের জ্ঞানভাণ্ডার আজ মহাসমুদ্র হয়ে স্বল্পায়ু মানুষের জ্ঞান-পিপাসা মিটানোর অপেক্ষায় আছে বইয়ের রূপ ধারণ করে। জ্ঞানের মহাসমুদ্রের কল্লোল শোনা যায় বইয়ের পাতায়। আজকের আর আগামী দিনের শিক্ষিত মানুষের কাছে অতীতের মনীষীদের সীমাহীন জ্ঞানভাণ্ডারের পরিচয় লাভের জন্য বই হল সর্বোত্তম মাধ্যম। বই সেতুবন্ধন রচনা করেছে অতীতে মানুষ আর বর্তমানে মানুষের মধ্যে। ভবিষ্যতের মানুষও একদিন এই বইয়ের মাধ্যমে তার অতীতকে জানবে- অতীতের মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠবে। তাই বই মানুষের মনের উপর চিরকাল ধরে প্রভাব বিস্তার করে আছে। বই পড়ার আনন্দ তাই মানুষের কাছে চিরন্তন উপভোগ্য বিষয়।


পাঠক মাত্রই জ্ঞানের সাধক। বই সুখের দিনে মানুষের পাশে থাকে দুঃখের দিনে মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে। বইকে যারা নিত্যদিনের সঙ্গী তারা সমাজের অন্য ৮-১০ জনের চেয়ে সব দিক থেকে আলাদা, তাদের মন-মনন সহিষ্ণুতা, মানসিকতা, চিন্তাধারা ভিন্ন। মানুষ তার সাধনার ফল বিধৃত করে রেখে গেছে বইয়ের পাতায়। মানুষ লিপি আবিষ্কারের পর থেকে তার জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাণ্ডার করেছে বইকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র শাখা-প্রশাখায় মানুষের ধ্যান-ধারণার যে প্রতিফলন ঘটেছে তা স্থান পেয়েছে বইয়ের পাতায়। জগৎ ও জীবনের সান্নিধ্যে মানুষ যে বিপুল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা বিধৃত হয়েছে বইয়ের কালো অক্ষরের মাধ্যমে। মানব জাতির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে বইয়ের মাধ্যমে। মানুষের সাহিত্য-সংস্কৃতি সবই বইয়ের বিষয়। অনাগত কালের মানুষের মনের ক্ষুধা মিটাবার উপকরণ সঞ্চয় করে আছে বই। মানুষ তার জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পাবে বই থেকে। জীবনের অগ্রগতির দিক নির্দেশনা আছে বইয়ে। বই যেহেতু মানুষের জীবন অবলম্বনেই রূপায়িত হয়ে ওঠে সেজন্য মানব জীবনের সকল দিক প্রতিফলিত হয় বইয়ের মাধ্যমে। বইয়ের জগতে এ বিপুল বিস্ময়কে মানুষ নিজের হৃদয়ে ধারণ করতে পারে বই পড়ার মাধ্যমে। আর জ্ঞানরাজ্যের সুবিশাল এলাকায় প্রবেশ করার যে সীমাহীন পথ তা কেবল বই পড়ার মাধ্যমে অনুসরণ করা সম্ভবপর। মানুষের মনের পুষ্টি যোগায় বই, বই শিক্ষা দেয় মানুষের মনকে উদার ও মানবিক হতে, জীবনকে পরিমার্জিত করতে, জীবনের শাশ্বত সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে এবং মানুষকে ভালোবাসতে।


বই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট ও ফলন্ত সম্পদ, কেননা বই যত পড়বে জ্ঞান ততোই বাড়বে। শিক্ষা দানের মাধ্যমে যেমন জ্ঞান প্রসারিত হতে থাকে বই পড়ার মাধ্যমে তেমনি করে জ্ঞান শুধু প্রসারিত হতে থাকে, তাই বই হচ্ছে এমন একটি সম্পদ যেখানে কোন বীজ রোপণ করতে হয় না শুধু কিছুটা সময় বইয়ের পেছনে ব্যয় করতে হয় তাতে যে সম্পদ অর্জন করা হয় তার সাথে পৃথিবীর অন্য কোন সম্পদের তুলনা হয়না। কেননা মানুষের জ্ঞান এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ যারা যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে তারাই এই পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ কেননা অর্থের ধন-সম্পদ দিয়ে কেউ জ্ঞানের ধনী কিনতে পারবে না। জ্ঞান কখনো কেনা-বেচা হয় না, এই সম্পদ কেবল তাঁর যে উপার্জন করে থাকে, পৃথিবীতে জ্ঞানীর জ্ঞান এখনো বিক্রি হচ্ছে না, এটা অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যায় না, তাই বই পড়ুন জ্ঞান বৃদ্ধি করুন! বিশ্বকে জানুন .......
বই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, পৃথিবীর কোনো ধন-সম্পদের সাথে বই এর তুলনা হতে পারে না। ধনী ধন-সম্পদ একদিন ফুরিয়ে যেতে পারে কিন্তু একটি বইয়ের অবদানে অর্জিত জ্ঞান কখনোই ফুরায় নয়।


বহু বিচিত্র বিষয় অবলম্বনে রচিত অসংখ্য বই-ই মানুষের হৃদয়ের অনাবিল আনন্দের অফুরন্ত উৎস। বিশাল কাল প্রবাহের মধ্যে ব্যক্তি মানুষের জীবন স্বল্পায়ু। সে জীবনকে সুখী করে তোলার ব্রত মানুষের। মানুষ তার মনের আনন্দকেই বড় বলে মনে করে। জীবনকে সুখী করার সাধনা মানুষের জীবনের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। গ্রন্থ-প্রেমিক মানুষ মনের আনন্দ উপভোগের জন্য হাতে তুলে নেয় বই। বই মানব মনের সঞ্চার করে অনাবিল আনন্দ। বই মানুষকে জ্ঞান দেয়, বই মানুষকে যোগ্য করে তোলে। জ্ঞান রাজ্যে বিচরণের সুযোগ দেয় বই। এসবই মানুষের আনন্দময় জীবন গঠনে পরিবেশ। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ সুখের জগতে বিচরণ করে। বই পড়ার সীমাহীন আনন্দ পাওয়া যায় অবকাশ যাপনের সময়। মানুষের জীবনে বিস্তর অবসর আসে। সে সব অবসর অনেকের জন্য ব্যর্থ কালক্ষেপণের নিদর্শন। এ অবসর সময়ে একটি বই হাতে তুলে নিলে চমৎকার আনন্দের ভিতরে দিয়ে সময় কেটে যাবে। অবসর বিনোদনের উপাদেয় সুযোগ দেয় বই। বই যদি জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে তা হলে জীবন অনেক বেশি উপভোগ্য হয়।


বর্তমানে প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট আমাদের জীবনের উন্নতিতে যেমন কাজে লেগেছে তেমনি ধ্বংস করছে সময় এবং শ্রমকে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষকে। আমাদের দেশে অনেক সময় এবং শ্রম নষ্ট হয় ফেসবুকে এবং যানজটে। যানজটে পড়ে যারা ফেসবুকে শুধু লাইক দেওয়ার পেছনে সময় ব্যয় করেন তারা অন্তত ওই সময়টুকুতে জ্ঞান অর্জনের জন্য ভালো একটি বই পড়তে পারেন। বসে থাকার সময় কিছুটা সময় বই পড়ার জন্য ব্যয় করলে সুস্বাস্থ্য এবং ভালো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হওয়া যায়। কারণ একমাত্র একটি ভাল বই-ই মানুষের মানসিক চাপ কমিয়ে দিতে পারে।


বই পড়ার মাধ্যমে যেমনি শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয় তেমনি স্মৃতি শক্তিও বৃদ্ধি পায়। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ যোগ হয়ে মস্তিষ্কের স্মৃতির ভাণ্ডারে আর বৃদ্ধি পায় শব্দভাণ্ডার। নিজেদের ইতিহাস, সভ্যতা, স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ইত্যাদির পাশাপাশি বহির্বিশ্বের ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যম হল দেশি ও বিদেশি লেখকদের ভাল ভাল নানান বই পড়া। ফলশ্রুতিতে পাঠকের বৈশ্বিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে চিন্তা-চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটবে, এতে করে জীবনে চলার পথে কঠিন পরিস্থিতিতে এর প্রয়োগ ঘটিয়ে নিজেকে সহজভাবে প্রকাশ করা সহজ হয়।


বই পড়ার আনন্দ সার্থক হয়ে উঠে জীবনের সঙ্গে বইয়ের সম্পৃক্ততায়। বইয়ের সান্নিধ্যে আসা মানেই মহা-মনীষীদের সান্নিধ্য লাভ। তাই বইয়ের জীবনের চলার পথের উপকরণ সংগ্রহ করা যায়। আগত দুঃখ ও দ্বন্দ্ব, সংশয় ও চাঞ্চল্য, হতাশা ও নৈরাজ্য মানুষকে অসহনীয়ভাবে শ্রান্ত করে। তখন প্রয়োজন পড়ে চালিত ও উদ্দীপিত করার, আশা ও সান্ত্বনার বাণী শোনাবার মত কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর। বই সেই অকৃত্রিম বন্ধু। বইয়ের নিদর্শন মানুষ জীবন খুঁজে পায় সংগতি ও সামঞ্জস্য, অগ্রগমনের পন্থা। জীবনের তিমিরাচ্ছন্ন বা বর্ণোজ্জ্বল দিনগুলোতে বই মানুষকে ত্যাগ করে না। পড়ার আনন্দ তাই সারা জীবন পরিপূর্ণ করে রাখে। মানব জীবনের অপূর্ণতা দূর করার ভূমিকা পালন করে বই। মানুষ তার জীবন তৈরি করে নেয়। বই নানাভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন গঠনে মানুষকে সাহায্য করে। মনীষী বেকন বলেছেন, পঠন তৈরি করে মানুষ আর প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, সুশিক্ষিত মানুষ মাত্রই স্বশিক্ষিত।


মানুষের মনের আনন্দের সম্পর্কটি জড়িত হয়ে আছে তার পরিতৃপ্তির সঙ্গে। মানসিক পরিতৃপ্তির ক্ষেত্রে বইয়ের ভূমিকা অনন্য। তার বিষয় বৈচিত্র্যের মধ্যে তা লক্ষণীয়। বইয়ের জগতে আছে বিষয়-বৈচিত্র্য। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, বিজ্ঞান প্রভৃতি প্রধান শাখার পরেও আছে নানান উপশাখা। একজন পাঠক তার নিজের রুচি অনুযায়ী বই পড়ে থাকেন। এক বা একাধিক বিষয়ের মধ্যে অবাধে বিচরণ করতে কোন নিষেধ নেই। একই বিষয়ও বৈচিত্র্য বিদ্যমান। উপন্যাসে শুধু সাহিত্য নয়, ইতিহাস, সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি নানা বিষয়ে পরোক্ষ জ্ঞান লাভ করা যায়। কাব্যের গভীরতা থেকে সংগ্রহ করা যায় জীবনদর্শন। শুধু আনন্দের আস্বাদন নয়, তথ্যের বিচিত্র সম্ভার নিয়ে দৃশ্যমান পরিবেশের জগৎ মানুষকে প্রতিনিয়ত ডাক দিচ্ছে গ্রন্থের বৈচিত্র্যময় ভাণ্ডারের দিকে। বিষয়ের প্রতি ঔৎসুক্য সৃষ্টি আর জ্ঞানার্জনের স্পৃহা মিটিয়ে বই আনন্দ উপভোগের সুযোগ দিচ্ছে। মানুষ বই পড়ার মাধ্যমে বিচিত্র ভাবের জগতে বিচরণ করে। জীবনকে উপভোগ করার অবাধ সুযোগ আছে বই পড়ার মধ্যে।


বই পড়ার আনন্দ পরিপূর্ণভাবে লাভ করতে হলে অগণিত বইয়ের মেলা থেকে উপযোগী বই নির্বাচন করে নিতে হয়। বইয়ের পাঠককে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। আগ্রহপূর্ণ দৃষ্টি, অনুচিন্তন, কৌতূহল, পরিমিত পাঠ- সবকিছু মিলে গ্রন্থপাঠ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ছাপাখানার বদৌলতে প্রতিনিয়ত অজস্র বই প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো-মন্দের সমাবেশ আছে। পাঠের বেলায় বাছাই না করলে পণ্ডশ্রম হবে। বই নির্বাচনের অস্থির অবস্থা আয়ত্তে আনার জন্য উচিত অভিজ্ঞ পাঠক, গ্রন্থাগারিক ও শিক্ষকদের সুপরামর্শ গ্রহণ। বিজ্ঞাপন আর গ্রন্থনামে প্রলুব্ধ হওয়া অনুচিত। বই পড়ার আনন্দ যেহেতু ভাল বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেজন্য ভাল বই নির্বাচনের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। মননশক্তি ও হৃদয়বৃত্তিকে জাগ্রত রেখে বইয়ের জগতে বিচরণ করতে হবে পাঠককে।


বইয়ের শব্দহীন শব্দগুলো মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে আলোড়ন ঘটিয়ে মনুষ্যত্বের দীক্ষা দেয়। বই থেকে এ উপকার মানুষের জন্য পরম আনন্দের। মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য বই বাহন হিসেবে কাজ করছে। পুরাতন অতীত জীবন্ত হয়ে আছে বইয়ের পাতায় পাতায়। গ্রন্থ পাঠের আনন্দের সূত্র ধরে মানুষ এগিয়ে চলে সভ্যতা আর সংস্কৃতির পথে। বইয়ের পাতার কালো অক্ষরে অমর হয়ে আছে মানুষের আত্মার চিরন্তন দ্যুতি। বইয়ের পথ আনন্দ অভিসারের পথ। সে পথ ধরে চললে পৃথিবীর কত না যুগের মানুষের কত না বিচিত্র ভাষার বাণী আজকের পাঠকের হৃদয়ে আনন্দের অনুরণন তুলবে। মানুষের মন এ আনন্দ সাগরে প্রতিনিয়ত অবগাহন করে পরিতৃপ্তি লাভ করছে। মানুষের হৃদয় ভরে উঠছে বই পড়ার নির্মল আনন্দে।

সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত  করি

আমাদের দেশে দিনের পরিক্রমায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে, বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও জ্ঞান আহরণের জন্য পাঠ্য বই-এর বাইরে জ্ঞানসমৃদ্ধ বই পড়ার পাঠক বা বই-পোকা বা বই-প্রেমীর সংখ্যা বাড়ছে না বরং ক্রমান্বয়ে কমছে। পাঠ্য বই-এর নিচে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার শিক্ষার্থী বা পাঠক তেমন একটা চোখে পরে না। শখের বসে গল্পের বই পড়ার শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। বই পড়ার প্রতি অনীহা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে আমাদের সন্তানদের মধ্যে। মনে হয় এর জন্য আমরা বাবা-মা’রাও বেশ-খানিকটাই দায়ী।


“এসো বই পড়ি-দেশ গড়ি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে জ্ঞানের মশাল প্রজ্বলিত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে নিয়ে আমরা বই পড়ি সাথে সাথে সন্তানদের বই পড়তে উৎসাহিত করি। আসুন প্রতিদিন কিছুটা সময় সৃজনশীল বই পড়ি এবং সন্তানদের বই পড়তে আগ্রহী করি। জ্ঞানের ভুবনে ফিরে গিয়ে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলি এবং বইকে আমৃত্যু সাথী করি। বই-বিমুখ জাতি কখনো জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করতে পারে না। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া একটি জাতি উন্নত হতে পারে না। জ্ঞানভিত্তিক ভাল বই না পড়লে একটি দেশে কখনো জ্ঞানী-গুণীর সমাবেশ ঘটে না; আর দেশে গুণীজনের অভাব থাকলে দেশ কখনো সঠিক পথে চলতে পারে না।


No comments:

এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না

এইটুকুতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর লাগবে না বিবেক সম্পন্ন মানুষ হওয়ার প্রয়োজনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য মোটা মোটা পুস্তক আর বড় বড় অট্টালিক...